স্কুলে পড়ার সময় একাধিকবার যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন বলিউডের পরিচিত অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা। নিজের আত্মজীবনী ‘সাচ কহুঁ তো’ বইয়ে সে কথা স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি তিনি। সঙ্গে প্রকাশ করেছেন তাঁর অসহায়তার কথাও।
পেশার সূত্রে একজন ডাক্তার, আরেকজন দর্জি। কিন্তু নীনা গুপ্তার কাছে দুজনের পরিচয়ই এক। দুজনেই তাঁর কাছে নির্যাতক ছাড়া কিছু নন। তিনি যখন স্কুলের ছাত্রী, সেই সময়েই যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন তিনি। সৌজন্যে এই দুজন। সেদিন যে কথা মাকে বলতে ভয় পেয়েছিল স্কুলপড়ুয়া মেয়েটি, নিজের আত্মজীবনী ‘সাচ কহুঁ তো’ বইয়ে সে কথা খোলাখুলি প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ অভিনেত্রী নীনা গুপ্তা।
আরও শুনুন: ৪২ লিটার স্তনদুগ্ধ দান হাসপাতালে, ছকভাঙা কাজে কুর্নিশ আদায় করলেন ভারতীয় মহিলা
নীনা জানিয়েছেন, ভাইকে নিয়ে চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে পরীক্ষা করার সময় ভাইকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন ডাক্তার। কিন্তু পরীক্ষা করার নামে চোখের বাইরে শরীরের অন্যান্য অংশেও হাত দিতে শুরু করেন ওই ডাক্তার। সমস্ত সময়টা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে ছিলেন নীনা, বাড়িতে ফিরেও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন এক কোণে। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল দর্জির কাছে গিয়েও। জামা বানাবার জন্য মাপ নিতে গিয়ে বারবার তার হাত নীনাকে অস্বস্তিকরভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। দুর্ভাগ্য যে, এরপরেও নীনাকে প্রয়োজনমতো সেই দর্জির কাছেই যেতে হত।
আরও শুনুন: Sach Kahun Toh : আত্মজীবনীর খোলা পাতাতেও Bold নীনা
এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটত তাঁর সঙ্গে। ক্রমশ নিজের মতো করে সেসব সামলাতে শিখে নিয়েছিলেন নীনা। ১৬ বছর বয়সে তাঁর এক বন্ধুর সদ্যবিবাহিত দাদার কাছ থেকেও এমন হেনস্তা উপহার পেয়েছিলেন তিনি। প্রস্তাব এসেছিল শারীরিক সম্পর্কেরও। কোনোভাবে সেই প্রস্তাব এড়িয়ে পালাতে পেরেছিলেন নীনা। অথচ এই সংকটের মধ্যেও তাঁর ভাবনা ছিল যে সেই বন্ধুর দাদা বা তাদের পরিবার যেন অসন্তুষ্ট না হয়।
এই ঘটনাগুলো নীনাকে যতটা অস্বস্তিতে ফেলেছিল, ততটাই অসহায়তা ছিল এসব কথা কাউকে বলতে না পারায়। আসলে নীনা মূলত যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়েকেই সেভাবেই চুপ করে থাকতে হয়। মাকে কখনোই এসব অভিজ্ঞতার কথা বলে উঠতে পারেননি নীনা। তাঁর ভয় ছিল হয়তো উলটে অভিযোগের আঙুল উঠবে তাঁর দিকেই। হয়তো শুনতে হবে এমন ঘটনা ঘটেছে তাঁর প্ররোচনা দেওয়ার ফলেই। কলেজে পড়ার সময় নীনা জানতে পারেন, তাঁর প্রায় সব সহপাঠিনীই এমন ঘটনার শিকার। এবং তারাও কেউ বাড়িতে সে কথা জানানোর সাহস করে উঠতে পারেনি। একই ভয়ে। পাশাপাশি এই ভয়ও কাজ করেছে, হয়তো যেটুকু স্বাধীনতা পাওয়া যায়, অভিযোগের আঙুল উঠিয়ে কেড়ে নেওয়া হবে সেটুকুও। নীনার আক্ষেপ, এখন ছোট ছোট বাচ্চাদেরও ‘গুড টাচ’ আর ‘ব্যাড টাচ’-এর পার্থক্য শেখানো হয়। কিন্তু বয়ঃসন্ধি পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এসব সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র অবহিত ছিলেন না তাঁরা।
নীনা গুপ্তার এই অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা স্পষ্ট হয়ে যায়। যৌন হেনস্তা যদি রোধ করতে হয়, তবে সবার আগে প্রয়োজন তা নিয়ে কথা বলতে পারা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা সোচ্চারে বলে উঠতে পারা। নির্যাতিতা যাতে নিজের কথা বলতে সংকোচ বোধ না করেন, সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করাটাই তাই প্রাথমিক কাজ। এমনকি ভয়ে আড়ষ্ট না হয়ে গিয়ে যাতে তিনি হেনস্তাকারীর মুখের উপর প্রতিবাদ করতে পারেন, ছোটবেলা থেকেই সেই জোরটুকু জুগিয়ে দেওয়া জরুরি। না হলে বড় পরিসর দূরে থাক, ছোট ছোট ক্ষেত্রেও যৌন হেনস্তার মিছিল রুখে দেওয়া সম্ভব হবে না কোনও দিনই।