ছোট থেকেই রান্নার প্রতি ঝোঁক। ইচ্ছা ছিল পেশার জগত হোক ‘রান্নাঘর’। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার তা মেনে নিতে পারেনি। তবু হার মানেননি। মাত্র ২১ বছর বয়সে নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধের ময়দানে। বহু ঝড় পেরিয়ে তিনি আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। নিজের সেই লড়াইয়ের কাহিনি শোনালেন মধুপর্ণা দে। শুনলেন শুভদীপ রায়।
২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে রেস্তরাঁ । বাইরের দেশে এ কোনও নতুন ব্যাপার নয়। এমনকি এ দেশেও যে নেই তা নয়। তবে খাস কলকাতার বুকে সংখ্যাটা নেহাতই কম। অথচ এই শহরেই এমন এক ২৪ ঘণ্টার রেস্তরাঁ । রয়েছে যার কর্ণধার একজন মহিলা।
:আরও শুনুন:
রান্না মেয়েলি কাজ! এই ধারণাটাই ভুল
গলফগ্রীন থানার ঠিক উলটোদিকে এই রেস্তরাঁ। খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। যে কোনও সময় গেলেই মিলবে পছন্দের খাবার। তাও এমন কিছু ভীষণ অচেনা পদ নয়। তবে স্বাদে গন্ধে সেসব অতুলনীয় বলা যায়। আর তার কারণ খোদ রেস্তরাঁর কর্ণধার মধুপর্ণা দে। ছোট থেকেই রান্না করতে বড় ভালোবাসেন। চেয়েছিলেন বড় হয়ে পেশা হিসেবে বেছেও নেবেন একেই। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে এই ধরনের শখ সবসময় প্রশ্রয় পায় না। এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়। বাড়ি থেকে তাঁর এই ইচ্ছা মেনে নেওয়া হয়নি। তাই জীবনের লড়াইয়ে পরিবারের ভীষণ কাছের সব মানুষকে পাশে পাননি। কিন্তু পিছিয়ে আসেননি কখনও। ব্যস্ততার যুগে যেখানে এত এত অপশন, সেখানে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন বরাবর। তার জোরেই ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাননি। তাই বলে পরিবারের কাউকেই কী পাশে পাননি? একেবারেই না। মধুপর্ণা নিজেই বারবার বলেন তাঁর দিদার কথা। যিনি প্রথমদিকে তাঁকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন। অভিভাবক হিসেবে ভরসা যোগানো তো বটেই, নিজের শেষ সম্বলটুকুও নাতনির স্বপ্ন পূরণের জন্য দিয়ে দিতে দুবার ভাবেননি। আর সেই আশীর্বাদে ভর করেই এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন মধুপর্ণা। যদিও সাফল্যের মাইলফলক ছোঁয়া বা এই ধরনের বিষয় নিয়ে কিছু ভাবতেই চান না তিনি। আগামী দিনেও সফলভাবে ব্যবসাটা এগিয়ে নিয়ে যাবেন এটাই লক্ষ।
আর এই লক্ষপথের অনুপ্রেরণা হিসেবে দুজনকে দেখেন মধুপর্ণা। প্রথমেই সুস্মিতা সেন। অভিনেত্রীর জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত মধুপর্ণাকে ব্যাপক সাহস জুগিয়েছে বলে দাবি তাঁর। বিশেষ করে, কলকাতার বুকে ২৪ ঘন্টার রেস্তোরাঁ চালাবে একজন মেয়ে এই পদক্ষেপ সাহস না থাকলে হয়তো নিতেই পারতেন না। আর দ্বিতীয়ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিতে ব্যবসা করতে পাড়ার যাবতীয় ক্রেডিট ‘দিদি’-কেই দিয়েছেন মধুপর্ণা। নিজে অবশ্য সেইভাবে রেস্তোরাঁ যান না। এক তো ছোট থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়ার অভ্যাস ঘনঘন রেস্তোঁরা যাওয়া শেখায়নি। দ্বিতীয়ত দিনের শেষে বাড়ির ডালভাতে তৃপ্তি পান মধুপর্ণা। আগামী দিনেও এইভাবেই এগিয়ে যেতে চান। তার জন্য মানুষের ভালোবাসাকেই অনুঘটক হিসেবে মনে করেন তিনি।