যেসব মহিলারা চাকরি করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সবসময়ই ঘরের কাজ আর বাইরের কাজের মধ্যে একটা দড়ি টানাটানি চলে। লক ডাউনে অনেকের বাইরের কাজ বজায় আছে বটে, কিন্তু বাইরে যেতে হচ্ছে না। ঘরে থেকেই সামলাতে হচ্ছে অফিস কাছারি, যার পোশাকি নাম ওয়ার্ক ফ্রম হোম। কিন্তু এতে কি সুবিধা বাড়ছে আদৌ? নাকি ঘর আর বাইরের সীমা গুলিয়ে গিয়ে অগোছালো হয়ে যাচ্ছে জীবনটাই?
রণিতা চট্টোপাধ্যায়কে জানালেন যশোধরা রায়চৌধুরী ও রাকা দাশগুপ্ত।
এই রে, ডালটা ধরে গেল বোধহয়! উফ রিমলি, কতবার বলেছি খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকবে না! এক্ষুনি স্কুলের বাস আসবে! আর মালতীদিও তেমন! ঠিক অফিসের দিনগুলোতেই হয় কামাই নয় লেট! শোনো, সামনের মাসেই ওকে ছাড়িয়ে দেব… অ্যাই রিমলি, জুতো পরে নাও!… এই যে, কাগজ পড়ে দেশোদ্ধার পরে করবে, আগে রিমলিকে বাসে তুলে দিয়ে এসো। আমাকে আজ পরীক্ষার খাতাগুলো জমা দিতে হবে, এখনও গোছাতে পারিনি… কি রে বাবা, একটা কাজ করে দিতে পারছ না?
চেনা ডায়লগ, না? লক ডাউন নামক বস্তুটি যতদিন জীবনে আসেনি, ততদিন পর্যন্ত কর্মরতা মহিলাদের রুটিনটা মোটামুটি এরকমই ছিল। সকালে সংসারের কাজকর্ম, স্বামী-সন্তানের খাবার-টিফিনের ব্যবস্থা সামলে নিজে নাকেমুখে গুঁজে দৌড়নো। ফিরে আবার সেই সংসারের কাজ, থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়। তবে, এইসবের মধ্যেই রয়ে যেত আরও অনেক কিছু। বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে টুকটাক গসিপ কি পিএনপিসি, টিফিন ভাগাভাগি, অফিসে আসা সীমাদি বা রমা বউদির কাছ থেকে ইনস্টলমেন্টে শাড়ি কেনা, কিংবা কোনও দিন একটু সময় চুরি করে সিনেমা হলে ছুট। তারপর এল কোভিড, তার সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এসে হাজির হল লক ডাউন। এদিকে কাজ তো বন্ধ করা যাবে না। দ্য শো মাস্ট গো অন! সুতরাং অগতির গতি, ওয়ার্ক ফ্রম হোম। কিন্তু এই ওয়ার্ক ফ্রম হোমের আওতায় এসে মহিলাদের অবস্থা ঠিক কী দাঁড়িয়েছে, সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক।
আরও শুনুন : বুক ফাটলে এখন মুখও ফোটে, মেয়েদের প্রতিবাদের মঞ্চ Social Media
আইটি সেক্টরে কর্মরতারা বলছেন, এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। আগে অফিসের একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল। কিন্তু এখন অফিস ঢুকে পড়েছে ঘরের মধ্যেই। অফিস আওয়ার্স বলে আর কিছু থাকছে না। এদিকে লক ডাউনের দরুন অনেকেই কর্মসহায়িকাদের আসতে বারণ করেছেন। ফলে অফিসের কাজের মধ্যেই কোনোমতে সারতে হচ্ছে রান্না খাওয়া বা বাড়ির অন্যান্য কাজ। অফিসের ক্যান্টিনে লাঞ্চ সারতে গেলে সহকর্মীদের সঙ্গে যে টুকরো আড্ডা হত, হারিয়ে গেছে সেই অক্সিজেনটুকুও।
সাহিত্যিক যশোধরা রায়চৌধুরী পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারি আমলা। তাঁর মতে, বাড়ির কাজের অধিকাংশ দায়িত্ব বর্তায় মেয়েদের ওপরেই, কিন্তু সে কাজগুলো যেন কেউ দেখতেই পায় না। অফিসের বদলে বাড়িতে বসে কাজ করতে গেলে মনোযোগেও বাধা পড়ে।
যাঁরা শিক্ষিকা, তাঁদের বারবার ‘বসে বসে মাইনে পাওয়া’-র অপবাদ শুনতে হয়েছে এই দুবছরে। কিন্তু আসল অবস্থাটা ঠিক কেমন? স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও অনলাইন ক্লাস চালু হয়ে গেছে পুরোদমে। চলছে পরীক্ষা এবং প্রোজেক্ট। অনেকেই বলছেন, ভার্চুয়ালি করতে হচ্ছে বলে পড়ানো এবং অফিশিয়াল কাজকর্ম দুই-ই জটিল হয়ে উঠছে সময়ে সময়ে। অধ্যাপক এবং লেখক রাকা দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন সে কথাই।
আরও শুনুন : পাড়ার রক থেকে Social Media: রুখে দিন Body Shaming-এর দাপট
সবার কথা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কিছু প্লাস পয়েন্ট তো আছেই, কিন্তু অসুবিধার তালিকাও কম লম্বা নয়।
আর কতদিন চলতে হবে এভাবে? প্রশ্নটা তো সহজ। কিন্তু উত্তর যে জানা নেই।