প্রাণের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। তারপর এই প্রথম বল পায়ে মাঠে নামলেন আফগানিস্তানের মহিলা ফুটবলারেরা। যদিও নিজের নামটুকু পর্যন্ত এখনও লুকিয়েই বাঁচতে হচ্ছে তাঁদের। কিন্তু ময়দান ছাড়তে নারাজ এই সাহসিনীরা। শুনে নিন।
খেলা ছাড়তে চাননি এই মেয়েরা। তাই ছাড়তে হয়েছিল দেশ। যদিও সহজ ছিল না সেই কাজটাও। কিন্তু গত বছরের আগস্ট মাসে সেই অসাধ্য সাধন করে ফেলার পর এই প্রথম বল পায়ে মাঠে নামল আফগানিস্তানের মহিলা ফুটবল দল। অস্ট্রেলিয়ার একটি এ-লিগ দল, দ্য মেলবোর্ন ভিক্টোরির সহায়তায় সে দেশের মাঠেই এবার খেলার সুযোগ পেল তারা। রবিবার ভিক্টোরিয়া’জ সিনিয়র উইমেন’স প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী ম্যাচে ড্র করে মাঠ ছাড়লেন আফগান মহিলা ফুটবল দলের মেয়েরা। তবে দেশের জার্সি পরে খেললেও নিরাপত্তার কারণেই সেই জার্সিতে নিজেদের নাম লিখতে পারেননি তাঁরা।
আরও শুনুন: কোলে শিশুকন্যা, ঠেলায় ক্রিকেট কিট… বিশ্বকাপের মাঠে নেমে নজির গড়লেন পাক মহিলা ক্রিকেট ক্যাপ্টেন
গত বছরের ১৫ আগস্ট ফের আফগানিস্তান দখল করে তালিবান। আর তারপরেই মেয়েদের উপর জারি হতে থাকে একের পর এক ফতোয়া। মেয়েদের শিক্ষার অধিকার, অর্থকরী কোনও কাজ করার অধিকার, এমনকি ইচ্ছেমত পোশাক পরার অধিকারেও হস্তক্ষেপ করে তালিবান। যেহেতু কোনও খেলাতেই সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাক পরা সম্ভব নয়, সুতরাং মেয়েদের খেলাধুলার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে বোরখা-পন্থী তালিবান। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সদস্যরাও দেশ ছেড়ে যেতেই চাইছিলেন। একে তো খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়, তার উপরে মেয়েদের হয়ে কথা বলার অপরাধ। সুতরাং তালিবান যে তাঁদের ছেড়ে কথা বলবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তালিবান কাবুল দখল করে নেওয়ার পরে দেশ ছেড়ে যাওয়াও খুব একটা সহজ ছিল না। কাবুল বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের জেরে একবার যাত্রা বাতিল হয়েছিল। এদিকে আসছিল লাগাতার হুমকি। অবশেষে ‘অপারেশন সকার বলস’ নামে এক রেস্কিউ মিশন তাঁদের উদ্ধার করে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন শহরে পৌঁছে দেয়। কিন্তু উদ্বাস্তু এই মেয়েদের কাছে খেলার বিষয়টি তখনও অনিশ্চিতই ছিল।
আরও শুনুন: ‘হিজাব আমার প্রতিভাকে ঢাকতে পারবে না’, বিশ্ব কাঁপাচ্ছেন এই পাক র্যাপার
অবশেষে এতদিন পরে প্রলেপ পড়ল সেই চিন্তায়। নতুন যাত্রা শুরু করলেন আফগান মেয়েরা। যদিও উদ্বেগ এখনও পুরোপুরি কাটছে না তাঁদের। তাঁরা তালিবান-অধিকৃত আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে পারলেও অনেকেরই পরিজনেরা রয়ে গিয়েছেন সেই দেশেই। ফলে তাঁদের নিরাপত্তার আশঙ্কা পিছু ছাড়ছে না এই মেয়েদের। আর সেই কারণেই প্রথা অনুযায়ী জার্সিতে খেলোয়াড়দের নাম ছিল না। পাছে সেই সূত্র ধরে তাঁদের দেশে থাকা পরিজনদের উপর অত্যাচার চালায় গোঁড়া তালিবানেরা, সেই ভয়েই এখনও কাঁটা হয়ে আছেন এই মেয়েরা। তবুও, সব বাধা সয়েও লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে নারাজ আফগানের এই বীরাঙ্গনারা।