মাত্র তিন বছর বয়সেই অ্যাসিড হামলা। চিরদিনের জন্য হারাতে হয়েছিল দৃষ্টিশক্তি। তবু জীবনযুদ্ধে হার স্বীকার করেনি একবারের জন্য। সেই খুদেই সম্প্রতি, দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় তাক লাগানো রেজাল্ট করেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে গোটা স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে সে। আসুন শুনে নিই, তার লড়াইয়ের গল্প।
ছোটবেলা থেকেই জীবনের মূলমন্ত্র ‘লড়াই’। সমবয়সীরা যতটা সহজভাবে জীবনযাপনের সুযোগ পেয়েছে, তার বিন্দুমাত্রও সে পাইনি। কারণ মাত্র তিন বছর বয়সেই অ্যাসিড হামলার মতো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। ওইটুকু বয়সেই চিরতরে হারাতে হয়েছিল দৃষ্টিশক্তি। তবু লড়াই থামেনি। আর সেই লড়াইয়ের জোরেই চূড়ান্ত সফলতার মুখ দেখেছে এই বছর পনেরোর খুদে। স্কুলের দশম শ্রেণির পরীক্ষায় সবাইকে অবাক করে প্রথম হয়েছে এই পড়ুয়া।
আরও শুনুন: আর এক মালালা! তালিবান হানায় ভাঙা দেওয়ালে ছবি আঁকেন কাবুলের অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী
কথা বলছি, চণ্ডীগড়ের ক্লাস টেন পড়ুয়া, কাফী-র সম্পর্কে। সম্প্রতি বোর্ড পরীক্ষায় স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে সে। তারপরই তাকে নিয়ে রীতিমতো হইচই শুরু হয়েছে এলাকায়। তবে শুধুমাত্র ভালো রেজাল্টের জন্য নয়, তাকে নিয়ে চর্চার প্রধান কারণ কাফীর জীবনযুদ্ধের কাহিনী। ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে হরিয়ানায় থাকতো এই খুদে। সেখানেই এক ভয়ঙ্কর কান্ড ঘটেছিল তার সঙ্গে। তখন তার বয়স মাত্র তিন। ঠিক এতটুকু বয়সের এক শিশুর উপর হয়েছিল অ্যাসিড হামলা। জনৈক কারণে দুই দুস্কৃতী এমন জঘন্য কাজটা করেছিল। পরে তারা পুলিশের জালে ধরাও পরে। শাস্তিও পায়। কিন্তু এই ঘটনার জেরে কাফী-র জীবনে যে অন্ধকার নেমে এসেছিল তার কোনও সমাধান হয়নি। অ্যাসিডের তীব্রতা সেইসময় কাফীর দুটো চোখই নষ্ট করে দেয়। বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ঘুরেও যার কোনও সুরাভা হয়নি। শুধু চোখ নয়, গোটা মুখটাই সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল তার। মেয়েকে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য, হরিয়ানা ছেড়ে চন্ডীগড় চলে আসে তার বাবা-মা। সেখানেই এক ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে কাফী। তার সমবয়সীরা যখন খেলায় মত্ত, তখন একমনে বই পড়ার চেষ্টা করতো সে। কারণ ওতটুকু বয়সেই কাফী বুঝতে পেরেছিল, একমাত্র পড়াশোনা করেই সে নিজের পরিচয় গড়তে পারবে। তাই সব কিছু ভুলে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করত।
আরও শুনুন: কেউ যুদ্ধ করেছেন, কেউ সামলেছেন সিংহাসন… ভারতীয় মুদ্রায় কুর্নিশ জানানো হয়েছে যে নারীদের
সেই লড়াইয়ের ফলও মিলেছে। দশম শ্রেণির পরীক্ষায় সে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছে। তার এই সাফল্যে যারপরনায় খুশি পরিবারের সকলেই। বিশেষত তার বাবা-মা, যারা এতদিন তার লড়াইয়ে পাশে ছিল। একসময় তাঁরা ভেবেই নিয়েছিলেন মেয়েকে বাঁচাতে পারবেন না। সেখান থেকে এই পরস্থিতিতে নিজেদের সন্তানকে দেখবেন বলে কল্পনাও করেননি তাঁরা। তবে এখানেই শেষ নয়। এখনও অনেক লম্বা সফর চলতে হবে কাফী-কে। আগামী দিনে জীবনের সব পরীক্ষাতেই সেরার সেরা হয়ে থাকতে চায় সে। স্বপ্ন একদিন আইএএস অফিসার হবে। প্রমাণ করে দেবে মনের ইচ্ছার সামনে কোনও কিছুই বাধা হতে পারে না। চেষ্টা করলেই সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।