গৃহস্থের মন চঞ্চল। হাজার দিকে তার মন বিক্ষিপ্ত। কিন্তু এই বিক্ষিপ্ত মন শান্ত না হলে তো ঈশ্বরের চরণে তা নিবিষ্ট হবে না? এর উপায় কী? সে কথাই শুনিয়েছিলেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ এবং শ্রীশ্রী মা।
জ্ঞানীজনরা বলেন, নির্লিপ্ত হও। ঈশ্বরে যদি মনোনিবেশ করতে চাও, তবে নির্লিপ্ত হয়ে সংসার করতে হবে। কিন্তু সে কি সোজা কাজ? মুনি-ঋষিরা শত শত বছর ধরে কঠিন তপস্যা করেন। কিন্তু গৃহস্থের আর সে উপায় কোথায়! তাকে কত কিছু না সামলাতে হয়। কত দিকে মন ছুটে যায়। সে সব সামলে কী করেই বা মন শান্ত হবে? এক বিন্দুতে স্থিত হবে?
আরও শুনুন: ভুল করলেই বাড়বে বিপদ, জানেন কীভাবে পুজো করলে তুষ্ট হন শনি দেব?
গৃহস্থের এ ভারী কঠিন সংকট। এ প্রশ্ন বারেবারেই তার মনে ভেসে আসে। আর সে উত্তর খুঁজে বেড়ায়। শ্রীশ্রীমা সারদা কাউকে দীক্ষা দিয়ে বলতেন, নিয়মিত জপ করতে। জপেতেই সিদ্ধি লাভ হয়। বলতেন, ধ্যান জপের একটা নিয়মিত সময় রাখতে হবে। সকাল সন্ধ্যায় বসতে হবে। ছাড়লে চলবে না। ধ্যান যদি নাও হয়, অন্তত জপ করে যেতে হবে নিয়মিত। স্নেহশীলা মায়ের এই ছিল উপদেশ।
আর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, ‘দিনকতক নির্জনে সাধন করতে হয়। তবে ভক্তিলাভ হয়, জ্ঞানলাভ হয়। তারপর গিয়ে সংসার করো দোষ নাই। যখন নির্জনে সাধনা করবে, সংসার থেকে একেবারে তফাতে যাবে। তখন যেন স্ত্রী, পুত্র, কন্যা মাতা, পিতা, ভাই, ভগিনী, আত্মীয়-কুটুম্ব কেহ কাছে না থাকে। নির্জনে সাধনের সময় ভাববে, আমার কেউ নাই। ঈশ্বরই আমার সর্বস্ব। আর কেঁদে কেঁদে তার কাছে জ্ঞান-ভক্তি প্রার্থনা করবে।’
সংসারী ভক্তের এবার প্রশ্ন জাগে, এভাবে সংসার ছেড়ে কতদিন থাকতে হবে? ঠাকুর বলেন, ‘ তা একদিন যদি এইরকম করে থাক, তাও ভালো। তিনদিন থাকলে আরও ভাল। বা বারোদিন, একমাস, তিন মাস, এক বৎসর যে যেমন পারে। জ্ঞান ভক্তি লাভ করে সংসার করলে আর ভয় নেই।’
আরো শুনুন: Spiritual: ঠাকুর বলতেন, কর্ম না করলে ঈশ্বরদর্শন হয় না…
তার কারণটিও বলে দিয়েছেন ঠাকুর। একবার যদি পরশমণি ছুঁয়ে সোনা হও তো আর ভয় নেই। বহু বছর মাটির নিচে চাপা পরে থাকলেও, সোনা, সোনাই থাকবে। ঠাকুর তাই তাঁর ভাষায় অসামান্য এক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘মনটি দুধের মতো। সেই মনকে যদি সংসার-জলে রাখ, তাহলে দুধেজলে মিশে যাবে। তাই দুধকে নির্জনে দই পেতে মাখন তুলতে হয়। যখন নির্জনে সাধন করে মনরূপ দুধ থেকে জ্ঞান-ভক্তি রূপ মাখন তোলা হল, তখন সেই মাখন অনায়াসে সংসার-জলে রাখা যাবে। সে মাখন কখনও সংসার-জলের সঙ্গে মিশে যাবে না – সংসার জলের উপর নির্লিপ্তি হয়ে ভাসবে।’