ক্রিকেট জ্যোতিষ হাস্যকর হয়ে পড়ল, ‘সংবাদ প্রতিদিন‘-এর পাতায় এমনই লিখেছিলেন প্রখ্যাত ক্রীড়া-সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য। ৩৬ রানে অল আউট থেকে ৩২৮ রান তাড়া করে জেতা, গাব্বায় সংঘর্ষপূর্ণ তিন উইকেটে জয় এবং সিরিজ ২-১ ছিনিয়ে নেওয়া যে সর্বকালের অত্যাশ্চর্য ফল, তা নিয়ে আর কোনও দ্বিমত বা সংশয় নেই।
গৌতম ভট্টাচার্য তাঁর মতামত জানালেন টিম ‘শোনো’কে। শুনলেন, সুশোভন প্রামাণিক।
অনেকেই বলছেন ইংরেজরা যথারীতি বোথামের হেডিংলে টেস্ট তুলনায় আনছেন। ‘৮১-র সেই বহু আলোচিত অ্যাসেজ সিরিজ। কিন্তু এখানে একটা গোটা টিম প্রায় এগারো জন বাইরে চলে গিয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন, কোহলি, জাদেজা, অশ্বিন, ইশান্ত, সামি, উমেশ, বুমরা, বিহারী, লোকেশ রাহুল। এটাকে একেবারেই ‘সেকেন্ড টিম’ বলা চলে। দূরদেশে রয়েছে চার মাস। তাঁদের এত রকমের সমস্যা। কখনও বাজে হোটেল, কখনও বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ, কখনও কোভিড রেসট্রিকশনের কারণে। এই অবস্থায় সাড়ে চারমাস পরিবার থেকে দূরে। এবং একেবারে অনভিজ্ঞ যাঁরা এখানে পারফর্ম করলেন, সেটা এই যেসব পুরনো টেস্টের কথা আলোচনায় আসছে, এখানের কোথাও হয়েছে বলে মনে হয় না। ব্রিসবেনে ভারত একটা নতুন ব্যাকরণ তৈরি করল।
গৌতম ভট্টাচার্য একটা ঘটনার কথা মনে করালেন। ইমরান খান, পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপের সময়ে এসেছিলেন। সেখানে কোহলির ভারত পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয়। মোহালিতে ভারত অস্ট্রেলিয়াকে হারায়। এই দুটো ম্যাচের সময়ের ইমরান অতিথি এবং বিশেষ ভাষ্যকার হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই ভারত আগের ভারত নয়, কারণ তারা আইপিএল খেলে প্রেশার নেওয়াটা শিখে গিয়েছে। ড্রেসিংরুমে টপ স্টারদের সঙ্গে থাকা এবং তাঁদেরকে কাছ থেকে দেখা, সঙ্গে আবার রাহুল দ্রাবিড়ের মতো একজন মেন্টরকে পাওয়া, সবদিক থেকেই এঁদের অনেক ‘এনলাইটেনড’ করেছে।
অধিনায়ক হিসাবে বিরাট কোহলি আর অজিঙ্ক রাহানে দু’জনে দুই মেরুর মানুষ। বিরাট টিমের মধ্যে কড়া অনুশাসনে বিশ্বাস করেন। তাঁর ধরন, আগ্রাসন, ফিটনেস কেন্দ্রিক চনমনে ভাব তাঁর দল সাজানোর অন্যতম প্রধান সূত্র। রাহানে যেহেতু দলেরই একজন, সেহেতু ড্রেসিং রুমে সব সেকশনের কাছে তিনি বেশি গ্রহণযোগ্য। আমার মনে হয়, ভারতীয় দলে যদি এই মুহূর্তেই কোনও গোপন ব্যালট হয়, তাহলে মনে হয়, অন্তত দু’-তিন ভোটে অজিঙ্ক রাহানে জিতবেন।
এই আলোচনায় কথায় কথায় উঠে এল হনুমা ভিহারি এবং চেতেশ্বর পূজারার নাম। তাঁদের দেখে অনেকেই শিখবে কীভাবে শ্রদ্ধা আদায় করা যায়। আইপিএল কন্ট্রাক্ট শুধু বি অল আর এন্ড অল নয়। উঠে এল ঋদ্ধিমান সাহার উইকেট কিপার হিসাবে প্রায় অস্তমিত হওয়ার সম্ভাবনার কথা। উইকেট কিপার হিসেবে নয় বরং ব্যাটসম্যান হিসেবে ভরসাযোগ্য পন্থ। কিপার হিসাবে তিনি একেবারেই সেরা নন।
দীর্ঘশ্বাস নয়, বরং চূড়ান্ত বেদনার মধ্যেও অবিরাম লড়াই করে যেতে হয় এটাই শেখাল রাহানের টিম।
শুনুন…
লেখা: গৌতম ভট্টাচার্য