আর মাত্র একটি ম্যাচ। নেহাত একটি ম্যাচ নয়, তা আসলে মেসি ও বিশ্বকাপ নামে এক ধারাবাহিকের অন্তিম পর্ব। ফুটবলের দেবতা মেসির উপর প্রসন্ন হবেন কিনা কে জানে! তবে সারা বিশ্ব জুড়ে ফুটবল্প্রেমীদের অনেকেই চাইছেন, মেসির হাতেই উঠুক বিশ্বকাপ। এমনকী সে দলে আছেন ব্রাজিলীয়রাও। কী বলছেন তাঁরা? আসুন শুনে নিই।
ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে এমন নান্দনিক ফুটবলের আশা বিশ্ব জুড়ে প্রায় সকল ফুটবল্প্রেমীরই থাকে। এবারও ছিল। তবে চলতি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে বহু আগেই। উলটোদিকে আর্জেন্টিনা ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ফ্রান্সের। আর এই সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়ে ব্রাজিলের অনুরাগীদেরও একাংশ চাইছেন, এবারের বিশ্বকাপটা অন্তত মেসির হাতেই উঠুক।
আরও শুনুন: ফ্রান্স নাকি আর্জেন্টিনা? বিশ্বচ্যাম্পিয়নের নাম জানালেন ‘ব্রাজিলের নস্ত্রাদামুস’
বলা যায়, ফুটবলজীবনে সবথেকে স্মরণীয় মুহূর্তটির সামনে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছেন মেসি। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে অনুরাগীর মন তো তিনি জয় করেইছেন। কে ভুলতে পারে তাঁর অবিস্মরণীয় সব গোল! সেই সব অবিশ্বাস্য দৌড়, বিস্ময়কর ড্রিবলিং- কে ভুলতে পারে! পারেন না কেউই। তবে তার পরেও অনুরাগীদের মনে অপ্রাপ্তির একটা বেদনা জেগেই আছে। ফুটবলের মঞ্চে প্রায় সব সম্মান পেয়েছেন মেসি। অধরা মাধুরী হয়ে শুধু থেকে গিয়েছে এই বিশ্বকাপ। পূর্বসূরি মারাদোনা যা পেরেছেন, তা মেসি এখনও তুলে দিতে পারেননি অনুরাগীদের হাতে। মেসির জন্য ভালবাসা, সম্ভ্রম থাকলেও, মারাদোনার পাশে তাঁকে বসাতে তাই একটু যেন কুণ্ঠিতই ছিলেন তাঁর দেশের অনুরাগীরা। এই বিশ্বকাপে সেই আবহ বদলেছে। মেসিও বদলে ফেলেছেন নিজেকে। ব্যক্তিপ্রতিভায় ফুল ফোটানো শুধু নয়, দল হিসাবে আর্জেন্টিনাকে তিনি যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন, তা লহমায় মন জয় করেছে আর্জেন্টিনাবাসীর। গ্যালারি তাই দ্বিধাহীন জানান দিয়েছে, কিংবদন্তি মারাদোনার পাশে তাঁকে বসাতে অনুরাগীরা তৈরি। মেসির জন্য রাস্তায় নেমেছেন মানুষ। এক অভূতপূর্ব আবেগের ঢেউ আছড়ে পড়েছে শুধু আর্জেন্টিনায় নয়, গোটা বিশ্বেই। বিশ্বকাপটা যেন সমস্ত হিসেবনিকেশের বাইরে গিয়ে শুধু মেসিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। মেসির দেশের সাংবাদিক যথার্থই বলেছেন, বিশ্বকাপ পাওয়া বা না-পাওয়া অন্য প্রসঙ্গ, কিন্তু মেসি দেশের মানুষের মধ্যে যে আবেগ জাগিয়ে তুলেছেন, যেভাবে ছোট থেকে বড় সকলের জীবনে প্রভাব ফেলেছেন, তার নমুনা মেলা ভার। সেই মেসিই তাঁর বিশ্বকাপ জয় থেকে আর মাত্র একটা ম্যাচ দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।
আরও শুনুন: ফাইনালে মেসিদের রেফারি মার্সিনিয়াকের জন্য গর্বিত ইনি, কিন্তু কেন?
আর এই আবহে খানিকটা যেন দ্বিধান্বিত ব্রাজিলের ভক্তরাও। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নাকি মেসিকে সমর্থন? এই প্রশ্নচিহ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মনে। এদিকে ব্রাজিলীয় তারকা কাফু তো বলেই দিয়েছেন যে, তিনি মেসিকেই সমর্থন করছেন, সেই নিরিখে তাঁর সমর্থন আর্জেন্টিনার দিকেই। রিভাল্ডো জানিয়েছিলেন, মেসির মতো প্রতিভার হাতে বিশ্বকাপ আগেই ওঠা উচিত ছিল। ঈশ্বর জানেন, কেন তা হয়ে ওঠেনি। মেসি ফুটবলকে যে গৌরব দান করেছেন, সেই কারণেই এই খেতাব যে তাঁরই হাতে ওঠা উচিত এ নিয়ে রিভাল্ডোর মনে কোনও সংশয় নেই। যেহেতু ব্রাজিল এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেই, যেহেতু নেই নেইমারের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আশা, অতএব তাঁর সমর্থন আর্জেন্টিনার প্রতিই। তারকাদের যখন এই বক্তব্য, তখন ব্রাজিলের সাধারণ ফুটবলভক্তরা কী বলছেন? ব্রাজিলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড ডেটা অ্যানালিসি-এর এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, অন্তত ৩৩ শতাংশ ব্রাজিলীয় মেসির টানেই ভেসে যেতে রাজি। অর্থাৎ তাঁরা চাইছেন বিশ্বকাপ জিতুন মেসিই। মেসির শেষ বিশ্বকাপের আবেগ যেমন এখানে আছে, তেমনই আছে মেসির নান্দনিক খেলার প্রতি টান। অনেকেই জানেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে মেসির সমগোত্রীয় এই মুহূর্তে আর কেউ নেই। আর তাই চিরকালের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সরিয়ে রেখে মেসিকে সমর্থন করছেন ব্রাজিলীয়দের একাংশ।
মেসির ম্যাজিক বোধহয়য় এটাই। তিনি খেলছেন আর্জেন্টিনার জন্য, খেতাব জয়ের লড়াইয়ে নামবেন আর্জেন্টিনার জন্যই। তবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলে রেখে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে দ্বিধা করছেন না ফুটবলপ্রেমীরা। এই বিশ্বকাপের পর আর তো এই মঞ্চে মেসিকে দেখা যাবে না। ফুটবলবিশ্ব তাই যেন মনে মনে বলছে, আরও একটু ‘মেসি’ হলে ক্ষতি কী!