‘কত কবি মরে গেল চুপিচুপি একা একা’, লিখেছিলেন কবীর সুমন। হ্যাঁ, লেখা যেমন কঠিন, সেই লেখার প্রচার পাওয়ার কাজটাও কিন্তু কম কঠিন নয়। কোন লেখার ভাগ্যে যে খ্যাতি জুটবে, আর কার দিকে পাঠকের নজরই পড়বে না, সে হিসেব মেলানোও ভারী মুশকিল। সেই কারণেই দেশে বিদেশে লেখকেরা দ্বারস্থ হন পেশাদার এজেন্টের, সাহায্য নেন মিডিয়া ও অন্যান্য প্রচারমাধ্যমেরও। কিন্তু, ভাগ্যের খেলাই বলা চলে বোধহয়, প্রায় কোনওরকম চেষ্টা না করেই লেখার দৌলতে বিপুল খ্যাতি জুটেছে একটি আট বছরের ছেলের। কীভাবে?
বাড়িতে ঘটেছে এক বড়সড় বিস্ফোরণ। তবে বোমা নয়, ক্রিসমাস ট্রি-র। আর তার দৌলতেই নাকি ১৬২১ সালে পৌঁছে গিয়েছে এক পুচকে ছেলে। হ্যাঁ, নিজেকে কাহিনির নায়কের জায়গায় বসিয়ে এমনই কল্পনার জাল বুনেছে আট বছরের এক খুদে, ডিলন হেলবিগ। পাঁচ বছর বয়স থেকেই খেয়ালখুশি মতো লেখালিখি করার অভ্যাস তার। আর এবার ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে ঠাকুমার থেকে একখানা ডায়েরি পেয়েছিল সে। এতগুলো সাদা পাতা একসঙ্গে হাতে পেয়ে সে তো আনন্দে আটখানা! আর টুকরো টুকরো লেখা নয়, এবার বড়সড় একটা পরিকল্পনা করে ফেলে সে। আর মাত্র চারদিনেই ডায়েরির পাতায় রূপ দেয় সেই পরিকল্পনাকে। ভাবছেন, এইটুকু পুচকের আবার কী এমন পরিকল্পনা? তাহলে শুনুন, ছবিতে ভরা গোটা একখানা বই লিখে ফেলেছে ডিলন! রীতিমতো অলংকরণ সহ ৮১ পাতা জোড়া এক গল্প, ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ ডিলন হেলবিগ’স ক্রিসমিস’। বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রির বিস্ফোরণের দৌলতে ১৬২১ সালে পৌঁছে গিয়েছে খোদ ডিলন, এমনই এক টাইম ট্রাভেলের কল্পকাহিনি বুনেছে সে। যে লেখাকে কেউ বলছেন কমিক বুক, কেউ বা সরাসরি গ্রাফিক নভেল-এর খেতাব দিতেও পিছপা হচ্ছেন না। মোট কথা, প্রথম বইয়েই রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে খুদে লেখক ডিলন হেলবিগ।
আরও শুনুন: শ্রবণশক্তি নেই, দাঁত তো আছে! অদ্ভুত কায়দায় পিয়ানোর শব্দ শুনতেন বধির বেঠোভেন
ভাবছেন তো, এত পাঠকের হাতে খুদে লেখকের বইটি পৌঁছল কেমন করে? না না, ছাপাখানার সুবাদে নয়। ডিলনের হাতে লেখা সেই পাণ্ডুলিপিটিই এ বইয়ের একমাত্র কপি। আসলে যে কোনও লেখকেরই যেমন নিজের লেখা সম্পর্কে পাঠকের মতামত জানার আগ্রহ থাকে, এই খুদে লেখকও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কীভাবে বইটি কিছু মানুষকে পড়ানো যায়, ভাবতে ভাবতে এক অভিনব উপায় বের করে ফেলে সে। আর ডিসেম্বরের শেষেই ঠাকুমার সঙ্গে লাইব্রেরিতে যাওয়ার সুযোগে বই প্রচারের কাজটা সেরে ফেলে ডিলন। লাইব্রেরির এক তাকে অন্যান্য বইয়ের ফাঁকে নিজের ডায়েরিটি গুঁজে দেয় সে। আর তাতেই কেল্লা ফতে! লাইব্রেরির সদস্যদের হাতে হাতে ঘুরতে থাকে বইটি। আপাতত বইটি ইস্যু করার জন্য ওয়েটিং লিস্টে নাম লিখিয়েছেন ৫৫ জন, এমনটাই জানিয়েছেন সেখানকার লাইব্রেরিয়ান।
আরও শুনুন: দুর্ধষ গুপ্তচর আবার তিনি গান্ধী অনুগামীও… সিনেমাকেও হার মানায় এই সাহসিনীর জীবন
প্রথম বইয়ের এহেন সাফল্য দেখে খুদে লেখকের খুশির সীমা নেই। তবে প্রশংসার জোয়ারে ভেসে যেতে সে রাজি নয়। তাই ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় বইয়ের নকশাও ছকে ফেলেছে সে। করে ফেলেছে নামকরণও, ‘জ্যাকেট-ইটিং ক্লোজেট’। জ্যাকেটখেকো আলমারিকে দিয়ে খুদে লেখক কীসব কাণ্ডকারখানা ঘটায়, আপাতত তা দেখার জন্যই অপেক্ষা করছেন পাঠকেরা।