খেলার মাঠের কিংবদন্তি চরিত্রদের স্মৃতি রোমন্থন করলেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকার জয়ন্ত চক্রবর্তী। বৈঠকি আড্ডার চালে বলা সেই অ্যালবাম ধরা থাকল ‘ময়দান মোমেন্টস’-এ।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে এই গল্পগুলোর অনেকটাই আমার শোনা। কিন্তু শুনেছি যাঁদের কাছে তাদের তো অস্বীকার করার জো নেই। কিংবদন্তী ক্রিকেটার পঙ্কজ রায় কিংবা ভাষ্যকার অজয় বসুকে অস্বীকার করবোই বা কি ভাবে? পঙ্কজদা বৈঠকি মেজাজে থাকলে গল্পের ডালা খুলে দিতেন। তাঁর একটা চালু লবজ ছিল, স্লো বোলারটাকে বুঝলি, তামাক খেতে খেতে মারলাম বাউন্ডারির বাইরে। এহেন পঙ্কজদার একটা দুর্বল জায়গা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলার রে গিলক্রিস্ট।
পঙ্কজ রায় আর গিলক্রিস্ট-এর দ্বৈরথের কথা অনেকেই জানেন, আমরা একটু উস্কে দেওয়ার জন্যে বলতাম, পঙ্কজদা ওই সেই গিলক্রিস্টটা! পঙ্কজদা সঙ্গে সঙ্গে শুরু করতেন, ওরেব্বাস, শালার কি চেহারা! ভাঁটার মতো চোখ, হাতের পাঞ্জা দেখলে ভিমরি খাবি। তো সে শালা বল নিয়ে লম্বা রান আপ-এ দৌড়ে আসছে, আমিও শালা তামাক খেয়ে তৈরি। বলটা অফ-স্ট্যাম্পের বাইরে রাখলো, কোমর সমান উঁচু, আমিও শালা বলের লাইনে গিয়ে তামাক খেয়ে হাঁকড়ালাম। বল শালা বাউন্ডারির বাইরে। গিলি, ওকে ওই নামেই ডাকতো সোবার্স টোবার্সরা, আমার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে হাপরের মতো হাঁপাচ্ছে। ভাবলাম একবার বলি, কি সাহেব কেমন লাগছে!
পঙ্কজদা সত্যিই রাজার বাড়ির ছেলে ছিলেন। সুন্দর চেহারা, চোখে রিমলেস চশমা। পঙ্কজদা’কে তাতিয়ে দেওয়ার জন্যে আমাদেরই কেউ বলতো, পঙ্কজদা, আপনি তখন টেস্ট খেলছেন, অমন সুন্দর চেহারা, কোনও মেয়ে প্রেমে পড়েনি?
তা শোন তাহলে বলি, তখন আমার বিনু মানকড় সঙ্গে ওয়েলিংটনে চারশো তেরো রানের বিশ্ব-রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে। গড়ের মাঠে সকালে নেট প্র্যাকটিস সেরে গাড়ি চালিয়ে কুমোরটুলির বাড়িতে ফিরতাম। মাঝে মহাজাতি সদনের কাছে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে কচুরি খেতাম। কোন শালা জানতো খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে একজোড়া মুগ্ধ চোখ আমাকে দেখে। ওরে শালা মারোয়াড়ি মেয়ে বাঙালি ক্রিকেটারকে দেখে মজেছিল, ভাবতে পারিস! তাও সেই সময়ে?
একেই বলে নিরুচ্চার প্ৰেম।
পঙ্কজদা’রা যখন খেলতেন তখন তো ক্রিকেটের আবহ এখনকার মতো ছিলনা। পঙ্কজদা’রা টেস্ট খেলতে যেতেন রেলের সেকেন্ড ক্লাসের কামরায়। পঙ্কজদার সঙ্গে স্পোর্টিং ইউনিয়ন-এ ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলেছেন অজয় বসু। তাঁরই মুখে শোনা, সেই সময়ে লাঞ্চে আলুর দম পাউরুটি পেলেই খেলোয়াড়রা খুশি। স্পোর্টিংয়ের সঙ্গে মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল এর খেলার দিন আলুর দমের বদলে চিকেন স্টু। স্টু এর আলু নিয়ে কাড়াকাড়ি করতেন ক্রিকেটাররা।
আজকের দিনে এসব ভাবা যায়?
লেখা: জয়ন্ত চক্রবর্তী
পাঠ: জয়ন্ত চক্রবর্তী
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস