খেলার মাঠের কিংবদন্তি চরিত্রদের স্মৃতি রোমন্থন করলেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকার জয়ন্ত চক্রবর্তী। বৈঠকি আড্ডার চালে বলা সেই অ্যালবাম ধরা থাকল ‘ময়দান মোমেন্টস’-এ।
আসলে এই কাহিনির সূত্রপাতের সময়, পাঁচের দশক, আমাদের সেখানেই ফিরে যেতে হবে।
বেঙ্গালুরু থেকে এক ফুটবলার এসেছিলেন, রাজপুত্রের মত চেহারা। নাম আমেদ খান। এই আমেদ খানকে দেখার জন্য, সেই সময়ের দক্ষিণ কলকাতার কলেজের ছাত্রীরা, বসুশ্রী সিনেমাহলের কফি হাউসে সামনে লাইন দিতেন। সেই সময় তাঁকে একবার চোখের দেখা দেখার জন্য মেয়েরা আকুল হতেন। এই আমেদ খান একবার ফুটবল মাথে খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পেলেন। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। আর সেই হাসপাতালে তার প্রেম হলো, সেই হাসপাতালের একজন সেবিকার সঙ্গে, যার পোশাকি নাম নার্স। সেই ভদ্রমহিলার নাম ছিল অঞ্জলি। তিনিই পরবর্তীকালে আমেদ খানের সহধর্মিণী।
এরপর যাঁর কথা বলবো, তাঁর নাম শুনলে শিউরে উঠবেন। তাঁর নাম চুনী গোস্বামী। অধুনা প্রয়াত এই ফুটবলারের প্রেমকাহিনী যে কোনও প্রেমের উপন্যাসের মত আকর্ষণীয়।
চুনী গোস্বামী তখন চুটিয়ে ফুটবল খেলছেন। যোধপুর পার্কে, প্রতিদিন সকালবেলা বাড়ির সামনে জগিং করতেন। সেইসময় সেখানেরই এক তরুণী বাসন্তীর প্রেমে পড়লেন চুনী গোস্বামী। চকিত চাহনি সেই অলিন্দ দিয়ে। এরপর দুজনের মন দেওয়া নেওয়া। সেই সময় তো আজকের মত ছিলোনা, ভিক্টোরিয়া মেমরিয়ল কিংবা গঙ্গার ঘাট। তখনকার দিনের প্রেম ছিল খানিক নিরুচ্চার।
বাসন্তী বৌদির কাছ থেকেই শোনা, তাঁরা সিনেমা দেখতে যেতেন প্রিয়া সিনেমা হলে। বাসন্তী বৌদি প্রায়ই অনুযোগ করতেন, সিনেমার শুরু আর শেষ তাঁর কখনোই দেখা হতোনা। কারণ, চুনী গোস্বামী সবসময় হলের আলো নিভে যাওয়ার পর হলে ঢুকতেন, তার কারণ, তাঁকে দেখলেই তখন মানুষ হইচই করে উঠত। সিনেমার শেষ পর্যন্ত দেখার সুযোগ তিনি পেতেন না, কারণ তিনি জানতেন, আলো জ্বললেই পরিভাষায় যাকে বলে ‘মবড’, সেই মবড হয়ে যাবেন। সে কারণেই চুনী গোস্বামী সবসময় সিনেমা শেষ হওয়ার আগেই হল থেকে বেরিয়ে যেতেন। বেচারা বাসন্তী বৌদি তাঁর আর সিনেমার গোড়াটাও দেখা হতোনা, শেষটাও দেখা হতোনা।
বিখ্যাত ফুটবলার পি. কে. ব্যানার্জি, তাঁর প্রেম কাহিনি আবার একটু অন্যরকম। তিনি প্রেমে পড়লেন, বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক জ্ঞান মজুমদারের মেয়ের। কিন্তু প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ফুটবলার, আর জ্ঞান মজুমদার অত্যন্ত পরিশীলিত বাড়ির মানুষ। আরতি মজুমদার সেই বাড়ির মেয়ে, সেই বাড়িতেই থাকেন। প্রেমে পড়লেই যে তাকে পেতেই হবে এমন তো কোনও কোথা নেই, কিন্তু প্রদীপ ব্যানার্জি গোল করার জন্য বদ্ধপরিকর। প্রদীপ ব্যানার্জি সেই বাড়ির চারপাশে জগিং করার নাম করে চক্কর কাটতে লাগলেন।
তারপর কি হল! শুনুন…
লেখা: জয়ন্ত চক্রবর্তী
পাঠ: জয়ন্ত চক্রবর্তী
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস