জন্মসূত্রে পাকিস্তানি। শুধু তাই নয়, সে দেশের জাতীয় দলের নামকরা খেলোয়াড়। অথচ তিনি অষ্টমীতে নিয়ম মেনে পুজো দেন। পালন করে নবরাত্রি। এমনকি রাম নামেও তাঁর এতটুকু আপত্তি নেই। সম্প্রতি নেটদুনিয়া মেতেছে তাঁরই চর্চায়। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নিই।
পুজোর আবহে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। তাও আবার ভারতেই। তাই উৎসবের আমেজে মেতে গোটা দেশ। তবে প্রতিবেশী দেশে সেই আনন্দের ছবিটা বেশ মলীন। লাগাতার হারের জেরে কার্যত বেহাল অবস্থা বাবর আজমের দলের। তবু নেটদুনিয়ায় চর্চার কেন্দ্রে নেই পাক দল। বরং তাদের সব লাইমলাইট কেড়েছেন প্রাক্তন পাক তারকা দানিশ কানেরিয়া।
আরও শুনুন: সনাতন ধর্মের সমালোচকরাই ‘রাবণ’! দশেরায় পুড়ল কুশপুতুল
ঠিক কেন?
নেপথ্যে রয়েছে দু দুটো কারণ। প্রথমত, দানিশ পাকিস্তানি হলেও মুসলিম নন। সে দেশের নাম মাত্র কয়েকজন অমুসলিম জাতীয় খেলোয়াড়দের অন্যতম তিনি। তবে ধর্মপরিচয় কখনও তার সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাড়ায়নি। একসময় পাকিস্তানের জার্সি গায়েই রীতিমতো দাপট দেখাতেন এই স্পিনার। টানা দশ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেইসময় ভারতের বিরুদ্ধেও বহু ম্যাচ খেলেছেন। দাপটের সঙ্গে নিয়েছেন উইকেট। সেইসব সাফল্যের জেরে যেমন শিরোনামে এসেছেন, তেমনই জড়িয়েছেন বিতর্কেও। বেশিরভাগই ধর্মীয় ইস্যুতে। কারণ পাকিস্তানে থাকলেও নিজের ধর্মপরিচয় ভোলেননি দানিশ। হিন্দুরীতি মেনে নিয়মিত পুজো পাঠ করেন। রাম নামেও তাঁর এতটুকু আপত্তি নেই। সম্প্রতি তাঁর নাম চর্চায় উঠে আসার দ্বিতীয় কারণও সেটিই। পাকিস্তানে থেকেও নবরাত্রি পালন করেছেন দানিশ। অষ্টমীতে পুজো দিয়েছেন, এমনকি পালন করেছেন দশেরা উতসবও। সেসব নিয়েই রীতিমতো হইচই শুরু করেছে নেটিজেনদের একাংশ। তবে ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো সক্রিয় দানিশ। নিজের জাতীয় দলের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রায়শই সমালোচনা করতে দেখা যায় তাঁকে। বিশ্বকাপের আবহেও ব্যতিক্রম হয়নি। পাকিস্তানের লাগাতার হার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে দানিশকে। আর এতেই যেন তাঁকে নিয়ে চর্চার জোর আরও বেড়েছে। কেউ কেউ প্রায় ধরেই নিয়েছেন, পাকিস্তানের প্রাক্তন এই খেলোয়াড় বর্তমানে ভারতকে সমর্থন করছেন। তিনি কোনও পোস্ট করলেই সেখানে রামের নাম লিখে আসছেন অনেকে। বদলে অবশ্য এতটুকু রাগ দেখাননি দানিশ। বরং তিনি যে এতে এতটুকু বিরক্ত নন, তা সাফ বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আরও শুনুন: মহাকাব্যের ‘মন্দজন’, তবু আছে মন্দির! দেশের কোথায় রয়েছে রাবণের মন্দির?
কিন্তু তাতে কি! নেটদুনিয়ার চর্চা থামেনি এতটুকু। তাই বাধ্য হয়েই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হয়েছে দানিশকে। সম্প্রতি ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে তাঁকে নিয়ে যে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে নেটদুনিয়া, তার মোক্ষম জবাব দিয়েছেন দানিশ। সাফ জানিয়েছেন, জন্মসূত্রে তিনি একজন পাকিস্তানি। তাই সেই দেশের জাতীয় দলকেই তিনি সমর্থন করবেন। বরং নেটদুনিয়ায় তাঁকে যতই উত্যক্ত করা হোক, তিনি কখনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। বলা বাহুল্য, তাঁর এই জবাবে যেন খেলোয়াড় দানিশকে খুঁজে পেয়েছেন কেউ কেউ। একসময় ব্যাটারের কড়া নজর এড়িয়ে তিনি যেভাবে বল ঘুরিয়ে উইকেট তুলতেন, এই জবাব যেন ঠিক সেই কাজ করেছে। নেটদুনিয়ায় সেইভাবে কাঁটাতারের বাধা নেই। সেই সুযোগে বর্ডারের এপার-ওপার দুদিক থেকেই একাধিক মানুষের নিশানায় বিদ্ধ হয়েছেন দানিশ। একদিকে ধর্ম, অন্যদিকে দেশপ্রেম, সবমিলিয়ে তাঁকে রীতিমতো হেনস্তা করেছেন কেউ কেউ। তবে তাদের সবাইকে সপাট জবাব দিয়েছেন দানিশ। তিনি যেন প্রমাণ করে দিয়েছেন সবার উপরে খেলা সত্য, তাহার উপর নাই।