ঈশান কোণে মেঘ নয়, রানের বর্ষণ দেখবে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। আইপিএলের দ্বিতীয় দিন ব্যাট হাতে নিয়ে মাঠে তাণ্ডব চালালেন বছর ছাব্বিশর ঈশান কিষান। আইপিএলে ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম ক্রিকেটার তিনি। কিন্তু সেই যোগ্য বাঁ-হাতি কেন হতে পারেননি ভারতীয় দলের একজন? লিখছেন সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়।
কি ভাবছেন, মশকরা করছি? গুগলি দিয়ে ঘেঁটে দিচ্ছি? না, মশাই। পুরোটাই সোজাসাপ্টা ব্যাপার। একটু ঝেড়ে কাশলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। কথা হচ্ছে, ঈশান কিষানকে নিয়ে। আইপিএলের দ্বিতীয়ায় ব্যাট হাতে কী তাণ্ডবটাই না চালালেন বছর ছাব্বিশর বা-হাতি! ৪৭ বলে ১০৬! ৪৫ বলে শতরান! আইপিএলে ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম, যুগ্মভাবে। তবে পরিসংখ্যানের ফুলঝুরির চেয়েও সবচেয়ে বড় কথা, রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ঈশানের এই শতরান কি পারবে তাঁর সামনে বন্ধ হয়ে যাওয়া জাতীয় দলের দরজা খুলে দিতে? উত্তরের আশায় আমাদের অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।
:আরও শুনুন:
‘পরাগ’রেণু আপনি জাগে আইপিএল-এ! নাকি নেপথ্যে সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে?
বড় রানের আকস্মিকতায় ঈশানের ব্যাট চমক দিতে ভালোবাসে। ঈশান নিজেও, তবে তা বিতর্কে। বছর তিনেক আগে যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্রুততম দ্বিশতরান করেছিলেন এই তারকা, অনেকেই মনে করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট এক যোগ্য বাঁ-হাতিকে পেয়ে গিয়েছে, যে কি না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, গৌতম গম্ভীর, শিখর ধাওয়ানের পর টিম ইন্ডিয়ার টপঅর্ডার-কে ভরসা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু তা আর হল কই!
:আরও শুনুন:
বিশ্বাস রাখো, হাল ছেড়ো না! বাটলার-বিস্ফোরণের মন্ত্র দিয়েছিলেন ধোনি-কোহলি
বোর্ডের ফতোয়া উড়িয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেলার গোয়ার্তুমি বিপদ ডেকে এনেছিল ঈশানের কেরিয়ারে। গত আইপিএলেও ছিলেন নিষ্প্রভ। টালমাটাল ফর্ম, আর বিতর্কে জেরবার বাঁ-হাতি তরুণের কেরিয়ার গড়ার আগেই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তবু নিজেকে হারিয়ে যেতে দেননি। নিজের আকাডেমিতে দু’বেলা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন, ফলও পেয়েছেন। চলতি আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে মাঠে নেমেই সেঞ্চুরি। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে পাল্টা আক্রমণই তখন বেঁচে থাকার উপায়, একমাত্র অবলম্বন। সেই অস্ত্রেই শান দিয়েছেন ঈশান। পাশে পেয়েছেন ফ্রাঞ্চাইজির হর্তা-কর্তাদেরও। কিন্তু জাতীয় দল? টিম ইন্ডিয়ার জার্সি? সে অন্য ঠাঁই। সেখানে জায়গা পুনরুদ্ধার করতে গেলে আইপিএলে আরও তাণ্ডব দেখাতেই হবে ঈশানকে। দেখাতেই হবে। আর সেই লক্ষ্যে ঈশানের আইডল হতে পারেন আরেক বাঁ-হাতি। বছর কুড়ি আগে জাতীয় দল থেকে ব্রাত্য হয়ে তিনিও লড়েছিলেন এইভাবে। উপেক্ষার জবাব দিয়েছিলেন ব্যাটে রান করে। নির্বাচক থেকে কোচ, বোর্ড কর্তাদের ঢোঁক গিলতে বাধ্য করেছিলেন। জাতীয় দলে ফিরেছিলেন স্বমহিমায়। ভারতীয় ক্রিকেটে সেটাই আজও সেরা কামব্যাক। সেই রূপকথার প্রত্যাবর্তনের নায়ক? আর কেউ নন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
:আরও শুনুন:
কেন আরও ভালোবেসে যেতে পারে না হৃদয়…
ঈশান কি পারবেন না, পূর্বসূরীর দেখানো পথে হেঁটে নিজেকে মেলে ধরতে। রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটাতে? পারলে তিনিই পারবেন। পারলে তাঁর ব্যাটই পারবে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। সেই মুহূর্ত এলে ঈশান কোণে মেঘ নয়, রানের বর্ষণ দেখবে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।