তাঁদের কেউ অভিজ্ঞ, কেউ তরুণ। কারও সাফল্যের খতিয়ান ঈর্ষণীয়, তো কেউ আবার চমকে দিচ্ছেন সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে। সকলেই প্রতিভাবান, তবু আইপিএল দাম দিল না তাঁদের। কারা তাঁরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আইপিএল-এর রোশনাইয়ের অপেক্ষা শুরু। সেই ঝাঁ-চকচকে ক্রিকেট-পার্বণে বাংলার জন্য বরাদ্দ রইল হতাশাই। প্রায় সাত-আটজন বঙ্গ ক্রিকেটার ছিলেন এবারের নিলামে। তবে, শেষ পর্যন্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ঝাড়াই-বাছাই করে নাম রেখেছিল শুধু ঈশান পোড়েল ও মহম্মদ কাইফের। কিন্তু ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি কারও ক্ষেত্রেই। অবিক্রিত থেকে গিয়েছেন দুজনেই। যা নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন বঙ্গ কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী।
আরও শুনুন: মাঠে যদি নমাজ পড়ি, তাতেও আপত্তি কীসে? বিতর্কে মুখ খুললেন খোদ শামি
তবে, শুধু বাংলার তরুণ ক্রিকেটারদেরই যে হতাশা সম্বল করে ফিরতে হয়েছে, তা কিন্তু নয়। চলতি আইপিএল-নিলামে অবিক্রিত ক্রিকেটারদের তালিকা দেখলে চোখ কপালে উঠবে। যেমন স্টিভ স্মিথের কথাই ধরা যাক। এক সময় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অধিনায়কত্ব করেছেন। টি-২০ ক্রিকেটে তিনি যে খুব উজ্জ্বল, এমনটা বলা যায় না। তবে ক্রিকেটবিশ্বে স্মিথের প্রতিভা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। নিলামে তাঁর বেস প্রাইস ছিল ২ কোটি টাকা, যা দিতে রাজি হয়নি কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি। শেষমেশ অবিক্রিত থেকে যান স্মিথ।
আরও শুনুন: মাহি-ম্যাজিকে শামিল গুগল! ধোনির জার্সির ৭ নম্বর আর কী কারণে স্পেশাল?
একই পরিণতি কিউয়ি ক্রিকেটার নিশামেরও। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাঁকে ‘ইউটিলিটি ক্রিকেটার’ বলা হয়, নিশাম কিন্তু তাই-ই। তবুও দল পেলেন না তিনি। আবার সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন কেশব মহারাজ। দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্পিনার ছিলেন আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। তবে, আইপি-এল এর পৃথিবী তাঁকেও তেমন যোগ্য মনে করেনি। যেমন খালি হাতে ফিরতে হয়েছে জেসন হোল্ডারকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অল রাউন্ডার কিন্তু আগে আইপিএল খেলেছেন। লখনউ সুপার জায়ান্ট এবং রাজস্থান রয়ালস-এর হয়ে খেলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে, ব্যাটে-বলে যেরকম পারফরমেন্স চায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো, তা সেভাবে দিতে পারেননি। ফলত প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তাঁরও। আবার শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা কিন্তু টি-২০ ক্রিকেটে বেশ পারদর্শী। তবে, বাধ সাধল তাঁর কিছুদিন আগের চোট। ব্যাট হাতে তেমন পারফরমেন্স দেখাতে পারেননি, ফলত তিনিও থেকে গেলেন অবিক্রিত।
আরও শুনুন: বিশ্বকাপে ধোনিকে করেছিলেন রান আউট, এখনও মেল-এ ‘কুকথা’ শোনেন গাপ্তিল
তবে, এবারের আইপিএল নিলামের উল্লেখযোগ্য দিক হল, বোলারদের দাম ওঠা। মিচেল স্টার্ককে রেকর্ড ২৪.৭৫ কোটিতে নিয়েছে কেকেআর। যা নিয়ে হইচই পরে গিয়েছে রীতিমতো। আবার কামিন্সকে হায়দরবাদ নিয়েছে সাড়ে বিশ কোটিতে। দুই বোলারের জন্য যেভাবে ঝাঁপিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো, তা ব্যাটিং নির্ভর টি-২০ ক্রিকেটে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও, কোনও কোনও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই অর্থব্যয় অযৌক্তিক। তর্ক চলছে, তবে বোলারদের গুরুত্ব যে বেড়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। একদিকে যখন এরকম বিপুল অর্থব্যয়, তখন রাচিন রবীন্দ্রের মতো তরুণ প্রতিভাকে আবার কেনা হয়েছে, যাকে বলে একেবারে জলের দরে। আইপিএল নিলাম এরকমই বৈচিত্রের সাক্ষী থাকল। বর্তমানে অবিক্রিত ক্রিকেটাররা হয়তো পরে দল পেতে পারেন, তবে তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।
কিন্তু ঝাড়খণ্ডের তরুণ ক্রিকেটাররা যেখানে নিলামে শরগোল ফেলে দিয়েছে, সেখানে বাংলা যে কেন বঞ্চিত রইল, তা এক রকম রহস্যই। সৌরাশিস লাহিড়ী প্রশ্ন তুলে বলছেন, “কেন বাংলার ছেলেদের ব্রাত্য রাখা হবে? রঞ্জিতে ফাইনাল খেলছি। সাদা বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করছে টিম। এই ছেলেগুলোই তো খেলছে। তাহলে নিলামে কেন ওদের নেওয়া হবে না?”
প্রশ্ন তো যৌক্তিক এবং স্পষ্ট, তবে উত্তর সেই অধরাই।