তাঁকে নাকি ভুল করে দলে নেওয়া হয়েছিল। তা সে ভুল কি শুধরে নেওয়ার মতো? শশাঙ্ক সিং বুঝিয়ে দিলেন, কিছু ভুল না শোধরালেও চলে। আসুন শুনে নেওয়া যাক তাঁর কথা।
তাঁকে নাকি ভুল করে নিলামে কিনে ফেলেছিল দল। সেটা ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩। ২০২৪-এর আইপিএল এর জন্য নিলাম চলছে। পাঞ্জাব কিংস, শশাঙ্ক সিং-কে কিনবে বলে হাঁক দেয়। সেইমতো কেনাকাটা হয়েও যায়। তবে সেই পর্ব সারা হতেই টিম ম্যানেজমেন্টের থেকে খবর আসে যে, ভুল হয়ে গিয়েছে বিলকুল। এক শশাঙ্ককে দলে নিতে গিয়ে অন্য শশাঙ্ককে দলে নেওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে ততক্ষণে নিলামের হাতুড়ি তার কাজ সেরে ফেলেছে। অগত্যা কী আর করা যাবে!
তা সে ভুলের মাশুল ঠিক কেমন? সাধারণত ভুলের মাশুল দেওয়া মানে খারাপ কিছু হওয়াকেই বোঝায়। তবে এক্ষেত্রে দেখা গেল কোনও কোনও ভুল ফুলও ফোটাতে পারে। গুজরাটের বিরুদ্ধে যে ইনিংস খেললেন শশাঙ্ক, তাতে বোঝা গেল শুধু সবুরে নয়, ভুলের ফলও মিঠে হতে পারে।
আরও শুনুন: তরুণ প্রতিভাকে বদলে দেন খাঁটি সোনায়, ধোনি যেন পরশপাথর
পাঞ্জাব অবশ্য তখনই একটা বিবৃতি টাঙিয়ে দিয়েছিল। মর্মার্থ হচ্ছে এই যে, ভুলের গল্পখানা একেবারেই ভুয়ো। আদতে কোনও ভুল-ই হয়নি। ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই মুচকি হেসে বলেছিলেন, নেহাতই ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা মাত্র। তবে সবথেকে বড় কথা, এরকম একটা ঘটনা সেই ক্রিকেটারের মনে কী ছাপ ফেলে? দেখা গিয়েছিল, শশাঙ্ক সিং বেশ শক্ত মনের মানুষ। চমৎকার রসবোধ। ভ্রান্তিবিলাসকে তিনি ‘কুল’ বলে স্রেফ উড়িয়েই দিয়েছিলেন। আসলে তাঁর ক্রিকেট-দর্শনই অন্যরকম। আর সে কথা বললেন, পাঞ্জাবকে ম্যাচ জেতানো মারকাটারি একখানা ইনিংস খেলে। বললেন, “ব্যাট হাতে যখন আমি নামি, তখন ভাবি, আমিই দুনিয়ার সেরা। কে বল করছেন তা দেখার দরকার নেই। শুধু বলটাকে দেখি, আর বল যেভাবে আসছে তা বুঝে নিয়ে ব্যাট চালাই।” সোজা-সাপ্টা কথা। তবে, এভাবে মনকে তৈরি করতে পারা মোটেও সহজ নয়। এমন ভাবনা ভাবতে পারেন বলেই, দলে তিনি বাঞ্ছিত না অবাঞ্ছিত সে প্রসঙ্গ মাথাতেই রাখেননি। গুজরাটের বিরুদ্ধে যখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন, তখন ঘাড়ে চেপে বসে আছে গিলদের রানের পাহাড়। উইকেটও চলে গিয়েছে বেশ কয়েকটা। জেতার সম্ভাবনা ৫ শতাংশেরও কম। ঠিক একই রকম পরিস্থিতিতে এসে শশাঙ্ক শুরু করলেন তাঁর রাজপাট। ২৯ বলে তাঁর করা ৬১ রান শুধু স্কোর নয়। আসলে বার্তা। যে বার্তা বুঝিয়ে দেয় তাঁর ক্রিকেট-ভাবনা। ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে টাকা-পয়সা, নিলাম ইত্যাদি ভারি ভারি ব্যাপার বটে। তবে আসল কথা হল ক্রিকেট। জনৈক তরুণ ক্রিকেটারকে ঠিক এই কথাটাই বুঝিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। বলেছিলেন, প্রাইস ট্যাগের কথা কে মাথায় রাখে! তা তো প্রত্যেকের জন্য আলাদা হবেই। কথা হল, মাঠে নেমে তুমি কেমন পারফর্ম করছ। শশাঙ্ক সিং হাতে-ব্যাটে সেই কথাটাই যেন মাঠে করে দেখিয়ে দিলেন।
আরও শুনুন: হে গম্ভীর! হে গম্ভীর! মাঠের বাইরে বসেই ম্যাজিক দেখানোর বাজিগর
এখন যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা তিনি যেন ক্রিকেট-কাব্যে বরাবরই একটু উপেক্ষিত। বাবা ছিলেন ক্রিকেট-ভক্ত। ১৯৯৬-এর বিশ্বকাপে সেমি ফাইনালে দেশকে হারতে দেখে ঠিক করে ফেলেছিলেন যে, ছেলেকে ক্রিকেটারই বানাবেন। সেই শুরু হল শশাঙ্কের জার্নি। আইপিএল-এ তিনি আগেও খেলেছেন। খোদ ব্রায়ান লারা তাঁকে দেখে অবাক হয়েছিলেন। যে ছেলের হাতে এত শটের বৈচিত্র, সে এত আন্ডাররেটেড কেন? লারার চোখে পড়েও অবশ্য সেভাবে ভাগ্য বদলায়নি। শশাঙ্ক ফিরে গিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। নিজের প্রতিভায় শান দিয়েছেন। এবারের আইপিএল-ও গোড়াতেই একবার ধাক্কা খেয়েছেন। তবে তাতে কী! তিনি তো বিশ্বাস করেন, ব্যাট হাতে নামলে তিনিই বিশ্বের সেরা। অতএব গুজরাটের রানের পাহাড়ও ভাঙল তাঁর জেদের কাছে। শশাঙ্ককে নিয়ে চর্চা কি আবার বাড়বে? চলতি মরশুমে নিশ্চিত সে উত্তর তাঁর ব্যাটই দেবে।