প্যাট কামিন্স ঝড়ে উড়ে গিয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। চলতি আইপিএল-এ এই মুহূর্তে সবথেকে চর্চিত তাঁর ইনিংস। প্রায় জয়ের দোরগোরায় দাঁড়িয়ে থাকা মুম্বইকে যেভাবে একা বেহাল করে দিয়েছেন কামিন্স, তা মন কেড়েছে বীরেন্দ্র শেহবাগের। সরস ভঙ্গিতে তিনি জানিয়েছিলেন, মুম্বইয়ের মুখের গ্রাস থুড়ি ‘বড়া পাও’ যেন ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন কামিন্স। আর বীরুর এই টুইটেই চটে লাল রোহিত শর্মা তথা মুম্বইয়ের ফ্যানরা। শেষমেশ নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দিতে হল শেহবাগকে। কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
তিনি নিজে ছিলেন বিগ হিটার। ভারতীয় ক্রিকেটের সংস্কৃতি প্রায় একা হাতেই বদলে দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র শেহবাগ। কিশোর কুমারের গান গাইতে গাইতে তাঁর একের পর এক ছক্কা হাঁকানোর গল্প এখন প্রায় মিথের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। এই শেহবাগ যে কামিন্সে মজবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আরও অনিশ্চয়তা এনে দেয় কুড়ি-বিশের ক্রিকেট। যেখানে মাত্র একটা ওভার কিংবা একটা আউটই বদলে দেয় ম্যাচের ভাগ্য। নাটকীয় পট পরিবর্তন ঘটে প্রতি মুহূর্তে। ঠিক সেরকমই একটি ঘটনা ঘটে গেল চলতি আইপিএল-এ।
আরও শুনুন: কপিলের ঐতিহাসিক ১৭৫-এর রেকর্ড নেই কোথাও, ঝলক ফিরল সিনেমায়
খেলা ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। ক্ল্যাস অফ দ্য টাইটানস বলাই যায়। রোহিত বনাম শ্রেয়সের দ্বৈরথ দেখতে মুখিয়ে ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। হাই ভোল্টেজ ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রেয়স। মুম্বই গোড়ায় একটু নড়বড়ে থাকলেও শেষমেশ বেশ কড়া চ্যালেঞ্জের মুখেই ফেলে কলকাতাকে, জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬২। মুম্বইয়ের বোলিং-এর বিরুদ্ধে এই রান তোলা সহজ ছিল না। একসময় তো বেশ বেকায়দাতেই পড়ে গিয়েছিলেন নাইটরা। পরিকল্পনামাফিক একের পর এক উইকেট তুলে নিতে থাকে মুম্বই। এমনকী চলতি আইপিএল-এর সেনসেশন রাসেলও রোহিতদের পাতা ফাঁদে পা দেন। জয়ের খুব কাছাকাছি যখন দাঁড়িয়ে রোহিতরা, তখনই ক্রিজে নামেন প্যাট কামিন্স। বাকিটা ইতিহাস। ১৪ বলে ৫০ রানের একটা ঝোড়ো ইনিংস সব হিসাব ওলটপালট করে দেয়। জেতা ম্যাচ হারতে হয় রোহিতদের।
আরও শুনুন: কর্মীরাই সম্পদ… মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল কর্মীদের ৭৪ হাজার টাকা বোনাস, নজির মালিকের
কামিন্সের এই মনমাতানো ইনিংস দেখে বীরেন্দ্র শেহবাগ যে আপ্লুত হবেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কলকাতা যখন জয় হাসিল করে নিল, তখন তিনি মন্তব্য করেন, মুম্বইয়ের মুখের গ্রাস থুড়ি ‘বড়া পাও’ যেন ছিনিয়ে নিলেন কামিন্স। প্রত্যাশিত ভাবেই কামিন্সের প্রশংসা করেন শেহবাগ। তাঁর হিটিং-এর তারিফ করেন। কিন্তু এই টুইট-কে মোটেও ভালোভাবে নিতে পারেননি মুম্বইয়ের ফ্যানরা। বিশেষত রোহিত শর্মার অনুরাগীরা। একে এমন জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়া, তার উপর শেহবাগের কৌতুক – সব মিলিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁরা। নেটদুনিয়ায় একের পর এক জবাবে নিজেদের রাগ গোপন করেননি মুম্বইয়ের ফ্যানরা। কেন বড়া পাও ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বললেন শেহবাগ, এই প্রশ্ন করতে থাকেন তাঁরা। অনেকেই মনে হতে থাকে, এহেন মন্তব্যে রোহিতের প্রতিই কটাক্ষ করেছেন শেহবাগ।
শেষমেশ নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দিতে হল বীরুকে। জবাবি টুইটে তিনি জানান, শুধুমাত্র শহরটা মুম্বই বলেই তিনি বড়া পাও-এর প্রসঙ্গ টেনেছেন। কেননা এই খাবার মুম্বই শহরের বাসিন্দাদের অত্যন্ত প্রিয়। একমাত্র এই কারণেই তুলনা টেনেছেন তিনি, অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। আর রোহিত শর্মা প্রসঙ্গে জানান, অন্য অনেকের থেকেও তিনি বড় ভক্ত রোহিতের ব্যাটিং-এর।
তবে এই সব তর্ক বিতর্ক ছেড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখন জায়গা করে নিয়েছে কামিন্সের মারকাটারি ইনিংসটিই। ১৫ বলে ৫৬ রান, তাও দলের সংকট মুহূর্তে। আধুনিক ক্রিকেটের যে নয়া ব্যাকরণ লিখে গেলেন কামিন্স, তা নিঃসন্দেহে তোলা থাকবে আইপিএল-এর ইতিহাসে।