পা কেড়েছে কাশ্মীরের যুদ্ধ। ২২ বছর ধরে সঙ্গী হুইলচেয়ার। কিন্তু জীবনযুদ্ধে হার মানেননি। প্যারালিম্পিকে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। কে এই সৈনিক? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মনের জোর থাকলে সব সম্ভব। বাস্তবে এর বহু উদাহরণ রয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার কাহিনী আমাদের শুনিয়েছেন মাসদুর রহমানের মতো ব্যক্তিত্বরা। একইভাবে প্রতিবন্ধকতাকে জয়ের কাহিনি শোনাচ্ছেন এ দেশের প্যারাথলিটরা। প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের পদক জয়ের খিদে তাঁদের হাত ধরেই মিটছে। সেই দলেই রয়েছেন হোকাতো সেমা। কাশ্মীরের যুদ্ধে পা হারিয়েও যিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন।
প্যারিস অলিম্পিকে আশানুরূপ ফল করতে পারেননি ভারতীয় অ্যাথলিটরা। দেশের ঝুলিতে একটিও সোনা জোটেনি। তবে প্যারালিম্পিক সেই ব্যর্থতা ভুলিয়েছে। মোট ২৭টি পদক জিতে দশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন ভারতীয় প্যারাথলিটরা। তার মধ্যে ৬ টি সোনা রয়েছে। হোকাতো সেমা অবশ্য সোনা জেতেননি। শট পাটে ব্রোঞ্জ পদক ঘরে এনেছেন। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে তিনি এই পদক জিতেছেন, তা প্রশংসা না করে উপায় নেই। প্যারালিম্পিকে অংশ নেওয়া অ্যাথলিটরা প্রত্যেকেই বিশেষভাবে সক্ষ্ম। কারও প্রতবন্ধকতা জন্ম থেকে। কেউ আবার দুর্ঘটনার শিকার। হোকাতো সেমাও একটি পা হারিয়েছিলেন যুদ্ধে। ২০০২ সালে কাশ্মীরের যুদ্ধে মাইন বিস্ফোরনে আহত হন সেমা। বাদ যায় এক পায়ের হাঁটুর নীচের অংশ। এরপর থেকে হুইলচেয়ারকে সঙ্গী করেই চলাফেরা। তবে মনের জোর হারাননি। সেনাবাহিনীর প্যারাথলিটদের দলে নাম লেখান।
শুরু করেন শট পাট খেলার অভ্যেস। একদিনে নিজেকে এই জায়গায় পৌঁছে দিতে পারেননি অবশ্যই। সময় লেগেছে বছরের পর বছর। ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য করেই এতগুলো বছর কাটিয়েছেন সেমা। ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিতে শুরু করেন। আসতে থাকে সাফল্য। ২০২২ সালে এশিয়ান প্যারা গেমসে ব্রোঞ্জ পদক পান হোকাতো। মরোক্কো গ্রাঁ প্রিতে রুপো পান তিনি। ২০২৪ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ স্থানে শেষ করেন হোকাতো। এবার ঝুলিতে ভরলেন প্যারালিম্পিকের পদক। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদিও। চাইলেই প্রতিকূলতাকেও যে জয় করা সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়েছেন হোকাতো। নাগাল্যান্ডের এক কৃষক পরিবার থেকে বিশ্বমঞ্চে পদকজয়ী অ্যাথলিট, হোকাতো সেমা সত্যি সত্যি রিয়াল লাইফের একজন নায়ক।