ইংল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত জয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একের পর এক নজির গড়ে নজর কেড়েছে আফগানিস্তান। তবে পুরুষ দলের এই সাফল্যে কোনওভাবে কি নতুন খোলা আকাশের স্বপ্ন দেখছেন আফগান মহিলা ক্রিকেটাররা?
তালিবান শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। ফতোয়া উড়িয়ে খেলতে নামাও তাই ‘স্বপ্ন’। তবে সত্যি না হোক, ভাবতে আপত্তি নেই। খোলা আকাশের অধিকার ফিরে পেতে, দেশ ছেড়েছিলেন আফগানিস্তানের দুই মহিলা ক্রিকেটার। ভেবেছিলেন, খেলার মাঠেই স্বপ্ন সত্যি হবে। একার পক্ষে এমন বদল আনা সম্ভব ছিল না। তাই আর্জি জানিয়েছিলেন সে দেশের পুরুষ দলের কাছে। বলেছিলেন, তাঁদের কন্ঠ্যস্বর হওয়ার কথা। তাতে লাভের লাভ বিশেষ হয়েছে, এমনটা বলা যায় না। হাজার হোক, তালিবান শাসনে মহিলাদের হওয়া সওয়াল করা আখেরে বিপজ্জনক। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আফগান পুরুষ দলের সাম্প্রতিক জয়, নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাঁদের, এমনটা বলাই যায়।
তালিবানের হাতে যাওয়ার পর থেকেই আফগান নারীদের অবস্থা হয়েছে শোচনীয়। প্রায় সমস্ত অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের। এমনকী নারীদের সামনে একচিলতে জানলা রাখতেও নারাজ তালিবান। সেখানে ক্রিকেট তো বহু দূরের স্বপ্ন। তবে খেলা শুধু খেলামাত্র নয়। জীবনের ঘাম-রক্তের গল্প বলে ক্রীড়া। আর তাই ক্রীড়া আর সাহিত্য যেন কোনও এক বিন্দুতে মিলেমিশেও যায়। ক্রিকেটও এর ব্যতিক্রম নয়। একটি জাতির পুনরুত্থান যেমন একটি ক্রিকেট ম্যাচের হাত ধরে হতে পারে। তেমনই, এই ক্রিকেটের দিকে তাকিয়েই নারীমুক্তির স্বপ্ন দেখতে পারেন কেউ কেউ। সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন আফগানিস্তানের ফিরোজা আমিরি ও বেনাফসা হাশিমি। মাতৃভূমে তাঁদের থাকা হয়নি। তালিবানের রক্তচক্ষু যখন পুনরায় আফগানিস্তান জুড়ে, তখন স্বদেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। তবে স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। একদিন দেশের হয়ে তাঁরা খেলতে পারবেন, এই আশায় বুক বেঁধেছেন। আর এমনটা সম্ভব হতে পারে যদি সে দেশের পুরুষরা তাঁদের হয়ে কথা বলতে পারেন। তবে সেখানেও সমস্যা এসেছে বারবার। নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে আফগান পুরুষ দলকে। আইসিসি টুর্নামেন্ট বাদ দিলে, অস্ট্রেলিয়ার মতোই দল তাঁদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেটে রাজি হয়নি। রাজনীতি কবজা করেছিল ক্রিকেটকে। তবে সেসব বাধা পেরিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছে আফগানিস্তান। শুধু খেলা নয়, ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে প্রমাণ করেছেন নিজেদের।
এমনটাই তো চেয়েছিলেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা দুই মহিলা ক্রিকেটার। পুরুষদের দল আরও খেলার সুযোগ পাক। সাফল্য আসুক। এই সামগ্রিক সাফল্য হয়তো একদিন নারীদের খেলার রাস্তাও খুলে দেবে, এমনটাই ভেবেছিলেন তাঁরা। পুরুষের দলের কাছে তাঁদের আরজি ছিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও সফল হয়ে মেয়েদের জন্য গলা তুলুন তাঁরা। দুই মহিলা ক্রিকেটার মনে করেছিলেন, পুরুষ ক্রিকেটাররা এই মুহূর্তে দেশে বিখ্যাত। তাঁদের কথা শোনার জায়গা আছে। ফলত তাঁরা যদি একবার মহিলাদের সমর্থন করতে শুরু করেন, তাঁদের হয়ে কথা বলতে শুরু করেন, তাহলেই মহিলারা আবার খেলার সুযোগ পাবেন। আফগানিস্তান আর আফগান মহিলাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠুক পুরুষদের ক্রিকেট দল। এতদিন তা সম্ভব না হলেও, এবার হয়তো আশার আলো দেখা দিচ্ছে। এইভাবে যদি আফগানিস্তানের পুরুষদল আরও জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছতে পারে, তাহলে তাঁরাও খোলা আকাশে মাঠে নামার সুযোগ পাবেন, এমনটাই বিশ্বাস ওই দুই মহিলা ক্রিকেটারের।