হিন্দুধর্মে পুজোর সময় তিলক পরার নিয়ম রয়েছে। বিভিন্ন মঠ বা ধর্মস্থানে সাধুসন্তরা সবসময় কপালে তিলক কেটে রাখেন। ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী তিলকের আকার পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু কপালের ঠিক মধ্যিখানে তিলক না কেটে পুজোয় বসেন না অনেকেই। কিন্তু তিলকধারণের কারনটা ঠিক কী? আসুন শুনে নিই।
শরীর মাত্রেই মন্দির। প্রত্যেকের অন্তরেই দেবতার বাস। এমনটা শাস্ত্রেই বর্ণিত। সেই দেবতা স্মরণের প্রস্তুতির অন্যতম তিলক ধারণ। শরীরের ১২টি স্থানে তিলকধারণ করা যেতে পারে। তবে কপালে বিশেষ আকৃতির তিলক মনের একাগ্রতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দেবারধনার ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
আরও শুনুন: কেনা-কাটায় মানা, বদল নয় ঠিকানাতেও! মল মাসে মানতে হয় আর কী কী নিয়ম?
হিন্দুশাস্ত্রে তিলক ধারণের নিয়ম বেশ প্রাচীন। বৈদিক যুগেও পণ্ডিতরা কপালে এই বিশেষ আকৃতি ধারণ করতেন। দেবতাদের কপালেও তিলক লক্ষ্য করা যায়। তবে সবক্ষেত্রে তা একরকম হয় না। দেবাদিদেবের কপালে যে তিলক দেখা যায়, শ্রী বিষ্ণুর তিলক তার থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। আবার সাধারণ পূজারি বা সাধকরা অন্য ধরনের তিলক পরেন। আসলে এর মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা হয়। শৈব, শাক্ত এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে তিলক ধারণের প্রচলন লক্ষ্য কর যায়। তবে সকলেরই তিলকের আকার আকৃতি আলাদা। এমনকি ধর্মবিশ্বাস ভেদে তিলকের জন্য নির্ধারিত সামগ্রীও আলাদা হয়। চন্দন, সিঁদুর, ভস্ম, মাটি, কিংবা অষ্টগন্ধার তিলক সর্বাধিক প্রচলিত। সেক্ষেত্রে সিঁদুরের তিলক ব্যবহার করা হয় শক্তি সাধনায়। চন্দনের তিলক বৈষ্ণবধর্মে, আর ভষ্ম বা অষ্টগন্ধার তিলক শৈব সাধকরা ব্যবহার করেন। নির্দিষ্ট দেবতার কপালেও এই বিশেষ সামগ্রী দিয়ে তিলক আঁকার চল রয়েছে। শিবলিঙ্গের শৃঙ্গারের সময় বিশেষভাবে আঁকা হয় ত্রিপুণ্ডক। তিলকের এক বিশেষ ধাঁচ বা আকৃতি এই ত্রিপুণ্ডক। তবে নারায়ণ শিলায় বা কৃষ্ণ মূর্তিতে যে তিলক দেখা যায়, তা অনেকটাই আলাদা। আবার শক্তি সাধকরা কপালের মাঝ বরাবর সিঁদুর দিয়ে তিলক কাটেন। শির, ললাট, কণ্ঠ, হৃদয়, দুই বাহু, বাহুমূল, নাভি, পিঠ ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে তিলক লাগানো যেতে পারে। মূলত বৈষ্ণব সাধকদের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে তিলক লাগানোর প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।
আরও শুনুন: বাড়িতে শিবলিঙ্গ রেখেছেন? পুজোর সময় ভুলেও এই কাজ করবেন না
তবে তিলক ধারণ করলেই হল না, এর বিশেষ কিছু নিয়মও রয়েছে। এক্ষেত্রে সবার আগে মাথায় রাখতে হবে কোন আঙুলের দ্বারা তিলক লাগাচ্ছেন। অনামিকা দিয়ে তিলক করলে মন ও মস্তিষ্ক শান্ত থাকে। আবার মধ্যমার সাহায্যে তিলকধারণ করলে বৃদ্ধি হয় আয়ু। বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়েও তিলকধারণ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তা পুষ্টিবর্ধক হিসেবে মনে করা হয়। সবশেষে তর্জনি, এর মাধ্যমে তিলকধারণ করলে মোক্ষ লাভ হয়। বিষ্ণু সংহিতা অনুযায়ী, দেব কাজে অনামিকা, পিতৃ কাজে মধ্যমা, ঋষি কাজে কনিষ্ঠা ও তান্ত্রিক কাজে প্রথমা আঙুল ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। আসলে আত্মাকে সম্মান প্রদানে তিলকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যেহেতু শরীরের সর্বত্রই আত্মার বিচরণ, তাই তিলককে একপ্রকার আত্মসম্মানের প্রতীক বলা চলে। যদিও কপালে তিলকধারণ সবথেকে উপযোগী। শাস্ত্রমতে এই স্থানে অগ্নিচক্র অবস্থান করে। তাই কপালে তিলকধারণ শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তিলকধারণ করলে অবশ্যই জীবন আরও সুস্থ স্বাভাবিক হয়। আর্থিক স্বাচ্ছল্য থেকে আরম্ভ করে ধর্ম কর্মে চেতনাবৃদ্ধি, সবই হতে পারে সঠিক নিয়মে তিলক ধারণ করলে।