ঈশ্বরের কাছে আমরা প্রার্থনা করি। যখন সেই প্রার্থনা পূরণ না হয়, তখন যেন মনে হয়, ঈশ্বর বলে কেউ কোথাও বুঝি নেই। অথবা মনে হতে থাকে, ঈশ্বর যদি অন্তর্যামীই হবেন, তাহলে, এত দুঃখ তিনি আমাদের দেন কেন? ভক্তমনে প্রশ্ন জাগে, কখন তবে ঈশ্বর শোনেন আমাদের প্রার্থনা? শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
সেদিন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বসে আছেন ভক্তদের মাঝে। কথা হচ্ছে আত্মদর্শন নিয়ে। ঠাকুর খুব নিশ্চিতভাবেই বললেন, সকলেরই আত্মদর্শন হতে পারে।
ঠাকুর বললেন খুব সহজ করে। কিন্তু এ তো খুব সহজ কথা নয়। ভক্ত জানেন, ‘আমি’র বিনাশ না হলে আত্মদর্শন সম্ভব নয়। ভক্তমনের সে কথা সহজেই বুঝে যান ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘দেখ আন্তরিক ডাকলে স্ব-স্বরূপকে দেখা যায়। কিন্তু যতটুকু বিষয়ভোগের বাসনা থাকে, ততটুকু কম পড়ে যায়।’
অর্থাৎ, ঝাঁপ দিতে হবে। ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য ঝাঁপ দিতে হবে। মাস্টারমশাইয়ের কথা শুনে ঠাকুর সানন্দে সায় দিলেন। মাস্টারমশাই আবার বললেন, ‘ঈশ্বর কর্তা, তিনি যে ঘরে যেমন করাচ্ছেন। কারুকে চৈতন্য করছেন, কারুকে অজ্ঞান করে রেখেছেন।’
আরও শুনুন: Spiritual: ব্রহ্মজ্ঞান কী? জীবের মুক্তির উপায়-ই বা কী?
ঠাকুর তখন বললেন, ‘তাঁকে ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করতে হয়। আন্তরিক হলে তিনি প্রার্থনা শুনবেনই শুনবেন।’
এইটেই হল সেই আসল কথাটি। ঈশ্বর তো আমাদের প্রার্থনা শুনবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু তাঁকে পাওয়ার আন্তরিকতা যেন ষোলআনা খাঁটি হয়। কিন্তু এই আন্তরিকতা, এই ব্যাকুলতা কীভাবে অর্জন করা সম্ভব?
ঠাকুর বুঝিয়ে বুঝিয়ে বলতে থাকেন, ‘লীলা ধরে ধরে নিত্যে যেতে হয়।’ যেমন সিঁড়ি ধরে ধরে ছাদে ওঠা। নিত্যদর্শনের পর নিত্য থেকে লীলায় এসে থাকতে হয়। ভক্তি-ভক্ত নিয়ে। এইটি পাকা মত। তাঁর নানারূপ, নানালীলা- ঈশ্বরলীলা, দেবলীলা, নরলীলা, জগৎলিলা; তিনি মানুষ হয়ে অবতার হয়ে যুগে যুগে আসেন, প্রেমভক্তি শিখাবার জন্য। দেখ না চৈতন্যদেব। অবতারের ভিতরেই তাঁর প্রেম-ভক্তি আস্বাদন করা যায়। তাঁর অনন্ত লীলা – কিন্তু আমাদের দরকার প্রেম, ভক্তি। আমার ক্ষীরটুকু দরকার। গাভীর বাঁট দিয়েই ক্ষীর আসে। অবতার গাভীর বাঁট।’
আরও শুনুন: Spiritual : মন থেকে চঞ্চলতা দূর করে নিজেকে পবিত্র ও সংযত করবেন কীভাবে?
উপস্থিত ভক্তেরা তখন শিহরিত। ঠাকুর চৈতন্যদেবের কথা বলে কি নিজের প্রতিই ইঙ্গিত করছেন? যেন বলছেন, আমি অবতীর্ণ হয়েছি। আমাকে দর্শন করলেই ঈশ্বর দর্শন হয়।
ঈশর তাই আমাদের প্রার্থনা শুনবেনই। কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছাবার পর্যায়গুলো আমাদের তাই পেরিয়ে পেরিয়ে যেতে হয়।
এর মধ্যে মণি মল্লিকের নাতজামাই ঠাকুরের কাছে এসেছিলেন। তিনি জন স্টুয়ার্ট মিলের আত্মজীবনী পড়েছেন।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।