তিনি ব্রিটেনের রানি। তাঁর যে বিপুল ধন-সম্পত্তি থাকবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! তবে সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সংগ্রহে যেসব অলঙ্কার ও রত্নরাজি ছিল, তার অনেকটাই নাকি ভারতের বিভিন্ন রাজাদের দেওয়া উপহার। রানির গলায় শোভা পাওয়া তিনশো হিরে খচিত সেই নেকলেসটি নাকি দিয়েছিলেন হায়দরাবাদের এক নিজাম। আর কী কী রয়েছে রানির সংগ্রহে?আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রাজপরিবারের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন আগেই। প্রায় সত্তরটি বছর তখতে থাকার পর প্রয়াত ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তাঁর অবর্তমানে রাজা হবেন তাঁর ছেলে চার্লস। ‘কুইন কনসর্ট’ হবেন যুবরাজ চার্লসের স্ত্রী, ডাচেস অব কর্নওয়াল ক্যামিলা। রানির প্রয়ানে শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব।
৭০ বছর ধরে একটানা ইংল্যান্ডের সিংহাসন অধিকার করে থাকা তো আর মুখের কথা নয়। রাজপরিবারের বিপুল সম্পত্তি নিয়ে তো কথাবার্তা হয় সর্বত্রই। আর তার মধ্যে গয়নাগাটি বা জহরৎও কিছু কম নেই। সেই বিখ্যাত কোহিনুর হিরেটির কথা তো সকলেরই জানা। ভারত থেকে ইংরেজদের হাত ধরে ব্রিটেনে পৌঁছেছিল সেই কোহিনুর হিরেটি। রাজপরিবারের নিয়ম অনুসারে, রানির মৃত্যুর পর সেই হিরেটি পাবেন চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা। শুধু কোহিনুরই নয়, রানির সংগ্রহে থাকা গহনা, রত্নরাজির অনেক কিছুই নাকি খোদ ভারতের পাঠানো উপহার।
আরও শুনুন: এ যেন রূপকথা! ৬০০ বছরের পুরনো প্রাসাদ-সহ গোটা দ্বীপের মালিক হলেন ব্যক্তি
প্রায় দুশো বছর ধরে ভারতে শাসন চালিয়েছে ব্রিটিশরা। শাসন যত করেছে, শোষণ করেছে আরও বেশি। এ দেশ থেকে কম সম্পত্তি তারা লুঠ করেনি। এ দেশের রাজারাজরারাও বহুমূল্য উপহার পাঠিয়েছেন সে দেশের রাজপরিবারের উদ্দেশে। সেসব হাত ঘুরে এসে পৌঁছয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাতে। কী কী আছে সেই তালিকায় শুনলে আশ্চর্য হবেন বৈকি।
জানা যায়, ১৯৪৭ সালে হায়দরাবাদের নিজাম দ্বিতীয় আসফ জাহ রানির বিয়ে উপলক্ষে তাঁকে একটি বহুমূল্য নেকলেস উপহার দেন। সেটি নাকি প্ল্যাটিনামের তৈরি। আর তাতে খচিত ছিল অন্তত ৩০০টি বহুমূল্য হিরে। নিজামের পাঠানো সেই নেকলেসটি পরে ছবিও ছিল রানির। ১৯৫২ সালে সিংহাসনে ওঠার পরেই তোলা হয়েছিল সেই ছবি। প্রায়শই নাকি সেই নেকলেসটি পরতেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ডিউক অব কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মেডলটনের বিয়ের পর কেটকে সেই নেকলেসটি উপহার দেন রানি। সেটি পরতে দেখা গিয়েছে কেটকেও।
আরও শুনুন: মাটি খুঁড়তে গিয়ে মিলল গুপ্তধন, ৬০ লক্ষ টাকার স্বর্ণমুদ্রা লাভ শ্রমিকদের
এখানেই শেষ নয়। হায়দরাবাদের নিজাম রানিকে একটি টায়রাও উপহার দিয়েছিলেন। যার উপরে খোদাই করা ছিল একটি গোলাপের নকশা। তাছাড়াও তিনটি ফুলের ব্রোচ ছিল তার উপরে, যেগুলি আবার আলাদা করা যেত টায়রাটি থেকে। প্রতিটি ব্রোচই নাকি ছিল প্ল্যাটিনামের তৈরি এবং হিরে খচিত। সেটিও অন্যতম পছন্দের গয়না ছিল রানির। প্রায়শই তাঁকে পরতেও দেখা যেত সেটি। আদতে হায়দরাবাদের এই নিজাম ছিলেন তৎকালীন ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। এমন অনেক অর্থই তিনি ব্যয় করেছেন রাজপরিবারের তোষণে।
রানির রাজ্যাভিষেকের ৭০ বছর উপলক্ষে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল রয়্যাল কালেকশন ট্রাস্ট। রাজ পরিবারের এই বিপুল গয়না ও রত্নের সংগ্রহ দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল জনসাধারণকে। বাকিংহাম প্যালেসেরই একটি অংশে চলতি বছরের ২২ জুলাই থেকে শুরু হয় সেই প্রদর্শনী। চলার কথা ২ অক্টোবর পর্যন্ত। রানির মৃত্যুর পরেও বদলাচ্ছে না কিছুই। এখনও তা জনসাধারণের জন্য খোলা। রাজপরিবারের গয়না, রত্ন ভাণ্ডারের পাশাপাশি প্রদর্শনীতে রয়েছে রাজ পরিবারের সদস্যদের সেই গয়না পরিহিত ছবিও।