শুধুমাত্র শ্যামা নয়, দীপান্বিতা অমাবস্যায় পূজিতা হন দেবী লক্ষ্মীও। বিভিন্ন প্রসিদ্ধ কালি মন্দিরেও এদিন দেবী কালীকে মহালক্ষ্মী রূপে আরাধনা করা হয়। একইসঙ্গে গৃহস্থ বাড়িতেও কালিপুজোর রাতে লক্ষ্মীপুজো করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। কী সেই পুজোর মাহাত্ম্য? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
শাস্ত্রমতে প্রত্যেক মাসের অমাবস্যা তিথিই মাতৃ-আরাধনার জন্য উপযুক্ত। তবে কেবলমাত্র কার্তিক মাসের অমবস্যাতেই দেবী কালীর শ্যামা রূপের পুজো হয়। বলা বাহুল্য এই দিনটিকেই ক্যালেন্ডারে কালীপুজোর দিন হিসেবে ধার্য করা থাকে। তবে এদিন দেবী কালীর পাশাপাশি দেবী লক্ষ্মীরও পুজো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
আরও শুনুন: মা কালীর বিশেষ কয়েকটি রূপের পুজো করেন না গৃহস্থরা, নেপথ্যে শাস্ত্রের কোন কারণ?
পুরাণে দেবী লক্ষ্মীর জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম সমুদ্র মন্থনের কাহিনি। যেখানে বলা হয়, সমুদ্র মন্থনের ফলে হাতে অমৃতের পাত্র নিয়ে পাতাল থেকে উঠে আসেন দেবী লক্ষ্মী। তবে সেদিন অমৃতের ন্যায় যেসব শুভ বা মঙ্গলময় বস্তুর উঠে এসেছিল, সেই সবকিছুরই বিপরীত আধারের বস্তুরও উত্থান হয়েছিল পাতাললোক থেকে। তাই অমৃতের সঙ্গে যেমন উঠে এসেছিল গরল, লক্ষ্মীর সঙ্গেই উঠে এসেছিলেন অ-লক্ষ্মী। একইসঙ্গে এই দুই দেবীর উৎপত্তি হয়েছিল বলে অনেকেই অলক্ষ্মীকে দেবী লক্ষ্মীর বোন বলেন। কিন্তু যে-কোনও দিক দিয়ে বিচার করলেই অলক্ষ্মী হলেন দেবী লক্ষ্মীর একেবারে বিপরীত। তিনি লক্ষ্মীর মতো শান্ত স্বভাবের যেমন নন, তেমনই সৌভাগ্যের প্রতীকও তিনি নন। পুরাণ ও শাস্ত্রে দেবী অলক্ষ্মীকে বর্ণনা করা হয়েছে কুরূপা, ঈর্ষা ও দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবেই। বলা হয়, লক্ষ্মীর পিছু নিয়ে গাধার পিঠে চেপে তিনিও হাজির হন গৃহস্থের ঘরে। কিন্তু পুরাণমতে কখনোই লক্ষ্মী ও অলক্ষ্মী একসঙ্গে থাকতে পারেন না। তাই লক্ষ্মীকে ঘরে রাখার জন্য অলক্ষ্মীর বিদায় নেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। অন্যদিকে যে-কোনো অশুভ শক্তিকে বিতাড়িত করার জন্য কালীপুজোর দিনটিই উপযুক্ত। তাই এইদিনেই অলক্ষ্মী বিদায় করে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করার প্রচলন রয়েছে। বাংলার ঘরে ঘরে এদিন গোবর দিয়ে অলক্ষ্মীর পুতুল বানিয়ে ঘরে দরজার বাইরে ফেলে আসা হয়। তারপর দেবী লক্ষ্মীর মূর্তিকে ভক্তিভরে অর্চনা করা হয়।
আরও শুনুন: শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থানেই তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ রূপ দিয়েছিলেন বাংলার প্রথম কালী বিগ্রহের
গৃহস্থ বাড়ির পাশাপাশি ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলার প্রসিদ্ধ মন্দির কালীঘাটেও লক্ষ্মী পুজো করা হয়। এদিন কালীঘাট মন্দিরের গর্ভগৃহে বিরাজমান দক্ষিণাকালী মহালক্ষী রূপে পূজিতা হন। এই মন্দিরেও কালীপুজোর সন্ধ্যেবেলা প্রথমে অলক্ষ্মী পুজো করে অলক্ষ্মী বিদায় করা হয়। তারপর গোটা মন্দির ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করে লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়। সন্ধ্যের পুজো শেষ হয়ে গেলে রাতে আরও একবার ভোগও নিবেদন করা হয়। মাতৃ-আরাধনায় শক্তি আর শ্রী এভাবেই মিলেমিশে যায় বাংলার উপাসনায়।