তিনি গ্রহরাজ। দেবতারাও তাঁকে সমঝে চলেন। কোথাও এতটুকু অধর্ম হলে আর রক্ষে নেই। শনির দৃষ্টি ছাড় দেয় না কাউকেই। কিন্তু পুরাণে কথিত আছে এমন কিছু দেবতার কথা, যাঁদের স্বয়ং শনিদেবও ভয় পান। তাই তাঁদের পুজো করলে বাঁচা যায় শনির দৃষ্টি থেকেও। কী রয়েছে এর নেপথ্যে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পুরাণের বিভিন্ন গল্পেই উল্লেখ মেলে সূর্যপুত্র শনির। একেবারে জন্মলগ্ন থেকেই তিনিই বিতর্কিত। এমনকি পার্বতীপুত্র গণেশের মাথা কাটা পড়ার ঘটনার সঙ্গেও অনেকে তাঁর প্রসঙ্গ টানেন। তবে তিনিই যে একজন প্রকৃত ধর্মরক্ষক, সেকথা নতমস্তকে স্বীকার করেন সকলেই। তাই যতই শনির দৃষ্টিকে দোষ দেওয়া হোক, আসলে তা কৃতকর্মের শাস্তিমাত্র। তবু সকলেই চিরকাল সুখে শান্তিতে থাকতে চান। মনের অজান্তে যদি কোনও অন্যায় ঘটে যায়, তবে তার জন্য শাস্তি পেতে কে চায়! আর সেই শাস্তির ভয়েই শনির দৃষ্টি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখাতে চান সকলেই। নিয়ম মেনে প্রতি শনিবার গ্রহরাজের পুজো করলে সে ফল অবশ্যই মেলে। কিন্তু শুধুমাত্র শনিদেব নন, আরও কিছু দেবতা ও ঋষির পুজো করলে শনির দৃষ্টি থেকে বাঁচা সম্ভব। জানেন কি, কারা সেই দেবতারা?
আরও শুনুন: আছে ‘পাপমোচন কুণ্ড’, বছরে একদিনই দর্শন মেলে কামাখ্যার বিশেষ শিবলিঙ্গের
সেই তালিকায় প্রথমেই আসেন মহাদেব। কথিত আছে, কোনও এক কারণে মহাদেবের অনুচরদের সঙ্গে বচসায় জড়ান শনিদেব। গ্রহরাজের কাছে রীতিমতো হেনস্তা হতে হয় ওই অনুচরদের। একথা জানার পরই ভয়ংকর রেগে যান শিব। তক্ষুনি ত্রিশূল হাতে শনির সামনের হাজির হন দেবাদিদেব। যুদ্ধ শুরু হয় দুজনের মধ্যে। খুলে যায় শিবের তৃতীয় নয়ন। তার সামনে দাঁড়ানোর সাধ্যি ত্রিভুবনে কারও নেই। শনিদেবও তাই হার স্বীকার করতে বাধ্য হন। কথিত আছে, এই ঘটনার কারণেই কোনও শিবভক্তকে দৃষ্টি দেন না শনি দেব। তাই মহাদেবের পুজো করলে অবশ্যই শনির দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এরপরই বলতে হয় হনুমানের কথা। তিনি আবার সূর্যদেবের শিষ্য। কথিত আছে, স্বয়ং সূর্যদেব প্রিয় শিষ্য হনুমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন শনিদেবের অহংকার চূর্ণ করার। গুরুর কথামতো সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন হনুমান। প্রথমে শনিদেবকে তিনি বোঝান সকলের মধ্যেই কিছু না কিছু খুঁত রয়েছে। তাই নিজেকে নিয়ে অহংকার করা একেবারেই অনুচিত। কিন্তু যতই বোঝানো হোক, সেকথা মানতে এতটুকু রাজি নন শনিদেব। অগত্যা তাঁর সামনে নিজের শক্তি প্রদর্শন করতে বাধ্য হন হনুমান। একসময় নিজের ভুল বুঝতে পারেন শনি। তিনি হনুমানকে কথা দেন, যে বা যারা নিষ্ঠাভরে হনুমানের পুজো করবে, তাঁকে শনিদেব কিচ্ছুটি করবেন না।
আরও শুনুন: শনিবার হল তাঁর পুজোর দিন, জানেন কীভাবে পুজো করলে তুষ্ট হন শনি দেব?
শনিদেব যে শুধুমাত্র এই দুই দেবতাকে ভয় পান এমনটা নয়। তালিকায় রয়েছেন এক ঋষিও। কথিত আছে, পিপল নামে ঋষিকে বেশ সমঝে চলেন শনিদেব। পুরাণের কাহিনী অনুসারে, এই পিপল মুনি ছোটবেলায় তাঁর বাবা-মা কে হারান। পড়ে তিনি জানতে পারেন তাঁর বাবা-মায়ের মৃত্যুর কারণ শনিদেব। তাঁর কোপেই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। সেই থেকে পিপল মুনি পণ করেন শনির উপর প্রতিশোধ নেবেন। দীর্ঘদিন ব্রহ্মার তপস্যা করে সেই বর লাভ করেন পিপল মুনি। তাই তাঁকেও বেশ ভয় পান শনি। কথিত আছে যে পিপল মুনির স্তব করলেও শনির দৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।