মহালয়ার আগে পনেরোদিন। শাস্ত্রমতে এই সময় পিতৃপক্ষ। বলা হয়, এই এক পক্ষকাল পিতৃপুরুষরা মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। পুরাণমতে, ব্রহ্মার নির্দেশেই গড়ে ওঠে এই মহামিলনক্ষেত্র। তাই এই সময় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার নিয়ম রয়েছে। সেইসঙ্গে আর কী করতে হয় এই সময়? কিংবা পিতৃপক্ষে কোন কোন কাজ অশুভ? আসুন শুনে নিই।
হিন্দুশাস্ত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এক তিথি, মহালয়া। পবিত্রও বটে। শাস্ত্রমতে, এই দিনেই পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয়। তাই মহালয়ার আগের পনেরোদিন পিতৃপক্ষ হিসেবেই পরিচিত। যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানেই পিতৃপুরুষের উদ্দেশে জলদানের নিয়ম রয়েছে। তবে প্রতিবছর পিতৃপক্ষের এই সময় জুড়েও পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পন করা যেতে পারে।
আরও শুনুন: বধ করেছিলেন বিষ্ণু, তবু কেন মহামায়াকেই বলা হয় মধুকৈটভদলনী?
পঞ্জিকা মতে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের পনেরো দিন পিতৃপক্ষ। চলতি বছরে ২৬ আশ্বিন মহালয়া। ইংরাজি হিসেবে অক্টোবর ১৪ তারিখ। সেইমতো তার ঠিক আগের পনেরো দিন পিতৃপক্ষ। অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে পিতৃপক্ষ। সাধারণত মহালয়ার দিনেই তর্পণ করা প্রচলিত রীতি। তবে কেউ চাইলে গোটা পিতৃপক্ষ জুড়েই তর্পণ করতে পারেন। মনে করা হয়, এইসময় শ্রাদ্ধ-শান্তি ও তর্পণ করলে পূর্বপুরুষেরা খুশি হন এবং আশীর্বাদ করেন। তাঁদের কৃপায় জীবনের অনেক বাধা দূর হয়। জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকেও মুক্তিও মেলে। শাস্ত্রমতে, হিন্দুদের অবশ্য পালনীয় যে পঞ্চমহাযজ্ঞের বিধান রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পিতৃযজ্ঞ অর্থাৎ তর্পণাদি। এই তর্পণ কথার অর্থ হল, যাতে অন্যের তৃপ্তি হয় সেই উদ্দেশ্যে জলদান। তর্পণ তাই শুধু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যেই নয়, সর্বভূতের উদ্দেশেই করতে হয়। এছাড়াও এই বিশেষ সময় কয়েকটি কাজ করা বিশেষ পুণ্যের। যেমন, পিতৃপক্ষে দান-ধ্যান অতি শুভ। অভুক্তকে অন্নদান করলেও বিশেষ ফল মেলে।
আরও শুনুন: দেবীর আগমন-গমনই বলে দেয় বছরের ভাগ্য, এবার কীসে চড়ে মর্তে আসছেন মা দুর্গা?
তবে এই সময় ভুল করেও কারও সঙ্গে বচসায় জড়াবেন না। মনে করা হয়, পিতৃপক্ষে আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই থাকেন যাঁদের বাস্তব অস্তিত্ব ঠাহর করা কঠিন। তাই তাঁদের যেন কোনওরূপ অসুবিধা না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখাই বাঞ্ছনীয়। অনেকে এই সময় নিরামিষ খান। জ্যোতিষমতে এরও বিশেষ এবং শুভ ফল রয়েছে। তবে পিতৃপক্ষে মদ্যপান থেকে বিরত থাকাই উচিত। বিশেষত যারা তর্পণ করবেন তাঁদের এই দিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। এছাড়া, পিতৃপক্ষে ব্রাহ্মমুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ম করে এই পনেরো দিন কেউ যদি সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছাড়তে পারেন, তবে তাঁর জীবনে শুভ পরিবর্তন আসতে বাধ্য। অন্যদিকে, এই সময়কালকে ‘শুভ’ বলা চলে না। তাই জাঁকজমক বা আড়ম্বর করে কোনও অনুষ্ঠান না করাই মঙ্গল। তবে পিতৃপক্ষের শেষ মানেই দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি। মহালয়ার পর থেকেই শাস্ত্রমতে মাতৃআরাধনা শুরু করা যেতে পারে। বেশ কিছু বনেদি বাড়িতে প্রতিপদ থেকেই চণ্ডীপাঠ শুরু হয়ে যায়। একদিকে দেবী মূর্তি ধীরে ধীরে পূর্ণ রূপে বিকশিত হয়ে ওঠেন, অন্যদিকে মর্তলোক সেজে ওঠে আলোর উৎসবে মেতে ওঠার আনন্দে।