বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া। পঞ্জিকামতে, বিশেষ ভাবে শুভ এই তিথি। কথিত আছে এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম। তাই অক্ষয় তৃতীয়ায় কয়েকটি নিয়ম মানলে সুখ সমৃদ্ধি অনিবার্য। শাস্ত্রমতে কী করতে হয় এই দিনে? আসুন শুনে নিই।
বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস বৈশাখ। তার শুক্ল পক্ষের তৃতীয়াই হল অক্ষয় তৃতীয়া। নাম থেকেই ইঙ্গিত মেলে, এইদিনে যে কোনও কাজই অক্ষয় হওয়ার বার্তা বয়ে আনে। তাই শাস্ত্রমতে এইদিন যা কিছু শুরু করা হয় তাতে শুভাশুভ ফলাফল অনিবার্য।
আরও শুনুন: হনুমানের আবির্ভাব তিথি, শুভ যোগে অন্য গুরুত্ব এবারের চৈত্র পূর্ণিমার
কথিত আছে, এইদিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম। তাই এই তিথি শ্রীবিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয়। আবার এইদিনেই সত্যযুগ শেষে শুরু হয় ত্রেতাযুগ। শুধু তাই নয়, বেদব্যাস এই দিনেই মহাভারত রচনা আরম্ভ করেছিলেন। স্বয়ং গণেশ তাঁর সামনে বসে সেই মহাকাব্য লিখেছিলেন। তাই এই বিশেষ তিথির সঙ্গে শ্রী গণেশেরও সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে দেবী বৈভব-লক্ষ্মী এইদিনেই কুবেরের গৃহে পদার্পণ করেছিলেন। বলা বাহুল্য এইদিনেই লক্ষ্মীলাভ করেছিলেন কুবের। তাই মনে করা হয়, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন কোনও শুভ কাজ করলে তা চিরকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। ঠিক তেমনই অশুভ কিছু করলে তার পাপ বহন করতে হয় আজীবন। এখান থেকেই অক্ষয় তৃতীয়ার কিছু নিয়মের প্রচলন ঘটেছে। বলা হয়, এইদিনে কাউকে কিছু দান করলে তা খুবই শুভ বার্তা বয়ে আনে জীবনে। এইদিন মিথ্যা কথা বলা, প্রতারণা বা এই ধরনের কোনও পাপ কাজ করা একেবারেই অনুচিত। করলে, সারা বছর তা বয়ে বেড়াতে হয়।
আরও শুনুন: স্বয়ং মহাদেব ভিক্ষা নেন তাঁর কাছে, ভক্তের অন্নের অভাব দূর করেন দেবী অন্নপূর্ণা
এইদিন সকাল থেকে বিশেষ কিছু নিয়ম পালন করার রীতি রয়েছে। সকালে শুদ্ধচিত্তে স্নান সেরে নিতে হয়। তারপর প্রয়োজন আছে এমন কাউকে যথা সম্ভব কিছু দান করতে হয়। দুঃস্থদের মধ্যে জামা-কাপড় দান করা এবং তাদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়া বিশেষ পুণ্যের। এছাড়াও তামার ঘট, নারকেল, সুপারি ও চন্দন কাঠ দান করাও অত্যন্ত শুভ। এতেই নাকি সংসারের মঙ্গল হয়। এছাড়া এইদিনে লক্ষ্মী-গণেশের পুজোর রীতি আছে। ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে এইদিন দোকানে পুজোর ব্যবস্থা করেন। বাড়িতেই সিঁদুর দিয়ে শুভচিহ্ন এঁকে রাখা বিশেষ ফলপ্রদ। মহিলাদের মধ্যে আলতা-সিঁদুর দান করার রেওয়াজ রয়েছে। মনে করা হয়ে, এর ফলে তাঁদের সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হয়। একইসঙ্গে মূল্যবান ধাতু কেনাও শুভাশুভ। সোনা, রুপো কিংবা অন্য কোনও ধাতুর জিনিস কিনতে পারলে খুব ভাল। তবে সারাদিন লোভ সংযত করে ঈশ্বরের আরাধনা করলেই সব পুণ্যের প্রকৃত ফল মেলে। সন্ধ্যায় পরিবারের সকলের সঙ্গে মিলে লক্ষ্মী-গণেশের আরাধনা করে প্রসাদ গ্রহণ করতে হয়। এতে যা কিছু মনস্কামনা সবই পূর্ণ হয়। তাই নিষ্ঠা ভরে অনেকেই অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটি পালন করে থাকেন।