রথযাত্রা মানেই জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা। ছোট-বড় অনেকের মধ্যেই এই ধারণা বর্তমান। আর কোনও দেবতাও যে রথে চড়ে নগরভ্রমণে বেরোতে পারেন সেই ধারণা নেই অনেকেরই। কিন্তু বাংলায় প্রচলন রয়েছে আরও অনেক ধরনের রথযাত্রা। যার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য মা তাঁরার রথ। জগন্নাথের রথযাত্রার দিনই তারাপীঠের মন্দির থেকে রথে চড়ে নগর ভ্রমনে বেরোন জগজ্জননি। কীভাবে শুরু হয়েছিল সেই রথ? আসুন শুনে নিই।
রথযাত্রার কথা বললেই সবার আগে মাথায় আসে পুরীর রথের কথা। আষাড় মাসের শুক্লা দ্বিতিয়ায় শ্রীমন্দির থেকে মাসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন প্রভু জগন্নাথ। বাংলাতেও এইদিন মাহেশ, গুপ্তিপাড়া ইত্যাদি একাধিক স্থানে মহা সমারোহে রথের আয়োজন হয়। কিন্তু শুধুমাত্র জগন্নাথ নন। এই একইদিনে রথে আসীন হন মা তাঁরাও।
আরও শুনুন: সাতদিনের জন্য মাসির বাড়ি থাকেন জগন্নাথ, কী বিশেষত্ব পুরীর গুন্ডিচা মন্দিরের?
বীরভূমের তারাপীঠ মন্দির শুধু বাংলা নয়, সারা দেশে বিখ্যাত। এখানেই অধিষ্ঠান করেন দেবী তাঁরা। সাধক বামাখ্যাপার সাধনক্ষেত্র এই তারাপীঠ তন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়। কথিত আছে, প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই শক্তিপীঠ। দেশের অধিকাংশ মহাপুরুষই এই মন্দিরে জীবনের কিছুটা অংশ কাটিয়ে গিয়েছেন। মন্দির ঘিরে প্রচলিত রয়েছে একাধিক লোককথাও। তবে আরও একটি কারণে এই মন্দির বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তা হল রথযাত্রা। প্রভু জগন্নাথের রথের দিনই মা তাঁরাকে রথে চড়িয়ে নগর পরিক্রমা করানো হয়। রথে আসীন মহামায়াকে দর্শণ করতে হাজারো ভক্তের ঢল নামে মন্দির সংলগ্ন রাস্তায়।
আরও শুনুন: রথের রশি ছুঁলেই কাটে দুর্ভোগ! কী বিশেষত্ব পুরীর রথের?
কথিত আছে তারাপীঠের বিখ্যাত সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ তারাপীঠের রথের প্রচলন করেছিলেন। সেইসময় তৈরি হয়েছিল একটি পিতলের রথও। যা আজও সযত্নে সংরক্ষিত। প্রতি বছর এই পিতলের রথে চড়েই নগরভ্রমণে বেরোন মা তাঁরা। এদিন প্রথমে মা তাঁরার বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয় মূল মন্দিরে। সেই পুজোর বিশেষ অংশ হল আরতি। অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি সময় নিয়ে এদিন মা তাঁরার আরতি করা হয়। তারপর মা-কে পরানো হয় রাজবেশ। এদিকে পিতলের রথটিও সুন্দর করে সাজিয়ে মন্দিরের বাইরে রাখা হয়। আরতি শেষে রাজবেশে পরিহিত মা তাঁরাকে তোলা হয় সেই রথে। রথটি বিশেষ বড় নয়। তাই গোটা রথ জুড়েই অবস্থান করেন দেবী তাঁরা। রথের উপর তাঁকে ঘিরে থাকেন সেবায়েতরা। তাঁদের কাছে ঝুড়ি ভর্তী বাতাসা আর প্যাঁড়া থাকে। দুইই মায়ের প্রসাদ। রথ চলাকালিন ভক্তদের উদ্দেশে সেই প্রসাদের লুঠ হয়। সকলেই সাগ্রহে তা কুড়িয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মনে করা হয়, দেবীর এই বিশেষ প্রসাদ গ্রহণ করলে পূর্নজন্ম হয় না। তাই প্রতিবছর দলে দলে ভক্তরা মায়ের রথযাত্রায় অংশ নিতে তারাপীঠে হাজির হন। একদিকে প্রভু জগন্নাথ মাসির বাড়ির উদ্দেশে এগোচ্ছেন। আর তখনই দেবী মহামায়ার স্বরূপ মা তাঁরা ভক্তদের মাঝে নগর পরিভ্রমন করছেন। দুটি দৃশ্যই যারা স্বচক্ষে দেখেছেন তাঁরা অবশ্যই ভাগ্যবান।