গীতায় শ্রী ভগবান বলেছেন, ‘মা ফলেষু কদাচন’। অর্থাৎ কর্ম করে যাও ফলের আশা কোরো না। ভারতীয় অধ্যাত্ম শাস্ত্র বলে, যে কোনও কাজকে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করার কথা। সঠিকভাবে ঈশ্বরের নির্দেশিত সেই কর্মের পথে হাঁটলেই জীবনে কখনও পরাজয়ের মুখ দেখতে হয় না। তবে সফলতার প্রসঙ্গে আরও কিছু নিয়ম পালনের উল্লেখ মেলে শাস্ত্রে। আসুন শুনে নিই।
মানুষ কাজ করে প্রকৃতির গুণ অনুসারে। কিছু মানুষ আছেন যাঁরা কাজ করেন আত্মসুখের আশায়। কিছু মানুষ কাজ করেন স্বার্থহীন হয়ে। সাধারণ মানুষ কাজ করে নিজের প্রয়োজনে ও ভোগসুখের আশায়। সে অর্থে এই কাজ কখনও মহৎ কাজের আখ্যা পেতে পারে না। তবে যে কোনও কাজেই সফল না হলে জীবনে ঘনায় হতাশার কালো মেঘ।
আরও শুনুন: ইমাম শাহ হলেন সদগুরু মহারাজ, হিন্দু ভক্তরা পিরের নাম বদলে দিতেই ক্ষুব্ধ মুসলিমরা
ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলছেন,
যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ।
স যৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে।।
অর্থাৎ, সমাজের যিনি শ্রেষ্ঠ তার নির্দেশিত পথই সাধারণ মানুষ অনুসরণ করে। শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির প্রবর্তিত রীতি মেনে চলাই তাদের অবশ্য কর্তব্য। মহান যিনি তাঁর কাজই হল কল্যাণকাজে সমাজকে ব্রতী করে তোলা।
অপরকে দীক্ষিত করার করার মূল মন্ত্র হল নিজেকে শুদ্ধ করা। যে ব্যক্তি শুদ্ধাচার জানেন না বা মানেন না তার পক্ষে অন্য কাউকে সেই পথ অনুসরণ করতে বলা অর্থহীন। তবে নিজের উপর বিশ্বাস রাখা একান্ত প্রয়োজন। শাস্ত্র বলে, যে ব্যক্তি কখনও নিজের উপর বিশ্বাস হারান না, তিনিই সব কাজে জয়ী হন। যদিও জয় পরাজয়ের বিস্তৃত বিবরণ মেলে গরুড় পুরাণে। সেখানেই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কিছু নিয়ম পালনের কথা। পুরাণ মতে এইসব নিয়ম মেনে চললে জীবনে কখনই হতাশার মুখ দেখতে হয় না।
আরও শুনুন: ভারতে যারা জন্মায় তারা সবাই হিন্দু, গুলাম নবি আজাদের দাবিতে শোরগোল নেটদুনিয়ায়
যার মধ্যেই প্রথমেই রয়েছে একদশী পালনের কথা। শাস্ত্রমতে মাসে দু-বার একাদশী তিথিতে নিরম্বু উপবাস পালনের নিয়ম রয়েছে। কেউ যদি সারাজীবন নিষ্ঠাভরে একাদশী পালন করেন, তবে তাঁর জীবনে কোনও দুঃখ থাকে না। স্বয়ং বিষ্ণু এই ব্রত পালনে তুষ্ট হন। এরপর বলতে হয় গঙ্গাস্নানের কথা। হিন্দু শাস্ত্রে গঙ্গা অতি পবিত্র। তাই প্রতিদিন গঙ্গাস্নানে যাবতীয় পাপ ধুয়ে যায়। স্নানের পর ভক্তিভরে তুলসী গাছে জল দেওয়া অত্যন্ত শুভ। এতেও শ্রী বিষ্ণুর কৃপা লাভ হয়। এছাড়া গুরুপূজার চাইতে উত্তম কাজ নেই বললেই চলে। শাস্ত্র এই কাজকে বিশেষভাবে মান্যতা দেয়। তবে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা করি সেটা ঈশ্বর লাভের পথে সহায়ক হওয়া চাই। যারা গৃহস্থসংক্রান্ত কাজ করেন, ধরুন ঘর ঝাঁট দিচ্ছেন, বাসন মাজছেন, কাপড় কেচে মেলে দিচ্ছেন, বাগান পরিষ্কার করছেন, রান্না করছেন, সেইগুলিকেও মনে করতে হবে, ঈশ্বর উপাসনা। সেগুলোকে কীভাবে আরও ঈশ্বরের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়, কর্মযোগ সেই শিক্ষা দেয়। ভালো, মন্দ, সমস্ত কাজ এবং কাজের ফলাফল ঈশ্বরকে সমর্পণ করতে হবে। একেই বলে ‘ঈশ্বরপ্রণিধান’ বা ঈশ্বরের প্রতি ফল সমর্পণ। আর এমনটা করতে পারলেই চলার পথে যে কোনও কাজে সাফল্য নিশ্চিত।