পূর্ণিমা মাত্রেই নারায়ণের প্রিয় তিথি। অন্যদিকে শ্রাবণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মহাদেবের নাম। তাই এই মাসের পূর্ণিমা যে বিশেষ হবে তা বলাই বাহুল্য। শাস্ত্রমতে এইদিন বিশেষকিছু কাজ করলে সাফল্য অনিবার্য। অন্যদিকে এমনও কিছু কাজ রয়েছে, পূর্ণিমার যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কী সেই কাজ? আসুন শুনে নিই।
একদিকে হরি অন্যদিকে হর। পুরাণের গল্পে অনেকক্ষেত্রেই দুই দেবতাকে এক আত্মাসম বলা হয়েছে। আর সেই মিলন প্রকট হয় শ্রাবণের পূর্ণিমায়। এদিন একযোগে আরাধনা করা যেতে পারে, নারায়ণ ও মহাদেবের।
আরও শুনুন: দোলপূর্ণিমা তিথিতেই আবির্ভাব মহাপ্রভুর, কেন তখন হয়েছিল চন্দ্রগ্রহণ?
কথিত আছে, শ্রাবণ পূর্ণিমায় শিবলিঙ্গে মিলত হন স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু। একইদেবে বিলীন হয়ে যুগ্মমূর্তিতে আবির্ভূত হন ত্রিদেবের দুই স্তম্ভ। তাই এ দিনে শিবের মাথায় জল ঢাললে বা শিবপূজা করলে, তুষ্ট হন নারায়ণও। শ্রাবণ মাস এমনিতেই শিবভক্তদের কাছে পবিত্র মাস। সেই শ্রাবণের পূর্ণিমা আরও মাহাত্ম্যপূর্ণ। এদিন নারায়ণ পুজো করলে অবশ্যই শিবপূজার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এদিন দুই দেবতার একত্র মূর্তিও অনেক জায়গাতেই পূজিত হন। দক্ষিণভারতে মূলত এই হরিহর মূর্তি চোখে পরে। তবে মূর্তি না থাকলেও নারায়ণ শিলা এবং শিবলিঙ্গ পুজো করা যেতে পারে। এদিন সকাল সকাল স্নান সেরে পুজো শুরু করা উচিত। চলতি বছরে শ্রাবণপূর্ণিমা পালিত হবে ১ আগষ্ট। দানধ্যানে বিশেষ ফল মেলে। আয়োজন যেমনই হোক, ভক্তি আর নিষ্ঠায় যেন কোনও খামতি না থাকে। অন্যদিকে পূর্ণিমায় চন্দ্রের পুজোও করেন অনেকেই। পূর্ণচন্দ্রের বিকাশ ঘটে এইদিন। তাই জ্যোতিষমতে চন্দ্রদেবের পুজো বিশেষ ফলদায়ক। তবে স্রেফ পুজো করলেই হল না, এইদিন অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে কয়েকটা নিয়মের কথা। ভুল করেও সেই নিয়মের লঙ্ঘন যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও শুনুন: পূর্ণিমা মাত্রেই নারায়ণের প্রিয় দিন, তবে গুরুপূর্ণিমার সঙ্গে বিশেষ যোগ রয়েছে মহেশ্বরেরও
প্রথমেই বলতে হয় তুলসীর প্রসঙ্গ। শাস্ত্রমতে পূর্ণিমায় তুলসীপাতা তোলা উচিত নয়। কোনওভাবে বাড়ির তুলসীগাছ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই অশুচী অবস্থায় তুলসীগাছে হাত দেওয়া উচিত নয় এইদিন। এছাড়া এদিন আমিষ না খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। কেউ কেউ এদিন উপবাস করেন। তবে সম্পূর্ণ উপবাস না করলেও চলে। পুজো হয়ে গেলে ফল বা মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের এইদিনটি বিশেষ ভাবে পালন করা উচিত। ভাত বা চালের কোনও জিনিসও এদিন না খাওয়াই ভাল। তবে আরও একটা কাজ করার ক্ষেত্রে এদিন সতর্ক থাকতে হয়। কোনওভাবেই মদ্যপান করা উচিত নয় পূর্ণিমা তিথিতে। এমনকি খারাপ চিন্তা বা কারও প্রতি হিংসা রাখলেও আপনারই ক্ষতি। কথিত আছে, শ্রাবণপূর্ণিমায় মন থেকে কিছু চাইলে অবশ্যই সেই ইচ্ছা পূরণ হয়। তাই ভক্তি ও নিষ্ঠা সহকারে এইদিনটি পালন করার পরামর্শ দেন শাস্ত্রজ্ঞরা।