পরিবেশকে ভালোবেসে, পরিবেশ বাঁচানোর জন্য অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন মহিলা। দূষণকেই তিনি নেল আর্টে বদলে দিচ্ছেন রোজ। কীভাবে কাজ করেন তিনি? শুনে নেওয়া যাক।
প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গিয়েছে সমুদ্র। কিন্তু পরিবেশ দূষণ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মাথাব্যথা কই! বাকু-তে সাম্প্রতিক জলবায়ু সম্মেলনে ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের রিপোর্ট বলছে, মানুষের বিবেচনাহীন কাজকর্মের দৌলতে সভ্যতা ভয়াবহ সংকটের মুখেই এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সভ্যতার সে সংকট নিয়ে মানুষ ভাবছে কি?
না-ভাবার সেই দলে অবশ্য সকলকে ফেলা যায় না। যেমন জাপানের এই ম্যানিকিওরিস্ট, সোজা বাংলায় যিনি নখের পরিচর্যা করেন, সেই নাওমি আরিমোতো। পরিবেশকে ভালোবেসে, পরিবেশ বাঁচানোর জন্য অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। দূষণকেই তিনি নেল আর্টে বদলে দিচ্ছেন রোজ।
আরও শুনুন:
দূষণের ঠেলায় চোখে অন্ধকার! তবু পরিবেশ নিয়ে মাথাব্যথা ঠেকে গেল মিম-মজাতেই
ব্যাপারটা ঠিক কী? আসলে আরিমোতো নিয়মিত প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন। টোকিওর দক্ষিণে তাঁর বাড়ির কাছেই সমুদ্র। সৈকতে বালির মধ্যে সবসময়ই পড়ে থাকে নানারকম প্লাস্টিকের টুকরো। মানুষের দৌলতেই এইসব বর্জ্য পদার্থে ভরে ওঠে সমুদ্রসৈকত। আরিমোতো সেখান থেকেই ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুকরো সংগ্রহ করেন। আর পরে সেইসব টুকরোকেই তিনি ব্যবহার করেন নেল আর্টের কাজে।
২০১৮ সালে মেরুদণ্ডজনিত অসুস্থতার কারণে পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছিলেন আরিমোতো। সমাজকর্মীর পেশা ছেড়ে নিজের বাড়িতে চালু করেন ম্যানিকিওরের কাজ। প্রথমদিকে সেই কাজ ছিল আর পাঁচজনের মতোই। কিন্তু সমুদ্রসৈকত পরিষ্কার করার দলে শামিল হওয়ার পর আরিমোতো দেখেন, বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে জমা হয়। হিসেব বলছে, তার পরিমাণ বছরে ২ কোটি টনের মতো। তার কিছুটা সৈকতেও ভেসে আসে, সেখানে জমে থাকে। আর সবটা মিলিয়েই পরিবেশ একটু একটু করে অসুস্থ হয়। সৈকত পরিষ্কার করতে গিয়েই এই দূষণ নিয়ে সচেতন হন আরিমোতো। আর তখনই তিনি ঠিক করেন, সচেতন করবেন মানুষকেও। এই সমস্যার কথা যদি আক্ষরিক ভাবেই মানুষের নখদর্পণে নিয়ে আসা যায়, তবে তো মানুষ সেদিকে তাকাতে বাধ্য হবে- ভেবেছিলেন আরিমোতো। আর এই ভাবনা থেকেই দূষিত বর্জ্যকে তিনি নেল আর্টের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার কথা ভাবেন।
৪২ বছরের আরিমোতো এক বিশেষ ধরনের হুইলচেয়ার ব্যবহার করে সমুদ্রসৈকত থেকে ওই প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেন। সেগুলোকে ধুয়ে রঙ অনুযায়ী আলাদা করেন, তাদের ছোট টুকরোয় কেটে ধাতব ছাঁচে গলিয়ে রঙিন ডিস্ক তৈরি করেন, যা কৃত্রিম নখে লাগানো যায়। ২০২১ সাল থেকে ‘উমিগোমি’ বা ‘সমুদ্রের আবর্জনা’ দিয়ে নখ সাজানোর কাজ করে আসছেন জাপানের এই মহিলা। তাঁর এই কাজ সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষকে পরিবেশ নিয়েও সচেতন করবে, এই আশাতেই কাজ করে চলেছেন এই ম্যানিকিওরিস্ট।