রথ বললেই পুরীর নাম মনে আসে। সে রথের সঙ্গে জগন্নাথ মন্দিরের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু জানেন কি, পুরীর বিখ্যাত শ্মশান অর্থাৎ স্বর্গদ্বারের সঙ্গেও রথযাত্রার এক বিশেষ যোগ রয়েছে? তাহলে সেই গল্পই শুনুন।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের খুব কাছেই অবস্থিত পুরীর স্বর্গদ্বার। মূলত এটি একটি শ্মশান। মৃত্যুর পর এই এই স্থানে এনে দাহ করা হলে সেই মৃত মানুষের আত্মা সরাসরি স্বর্গে যায় বলে লোকবিশ্বাস। কিন্তু কেন এই অঞ্চলকে স্বর্গদ্বার বলা হয়? কীভাবেই বা স্বর্গদ্বার এক শ্মশানে পরিণত হল? আর এই শ্মশানের সঙ্গে রথের যোগই বা রয়েছে কীভাবে? আসুন, সেই গল্পই বলি বরং।
আরও শুনুন:
বিনামূল্যে তীর্থদর্শনের দায়িত্ব নিল সরকার, কোন রাজ্যে চালু নয়া প্রকল্প?
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের যে চারটি দ্বার রয়েছে সে তো সকলেরই জানা। সেগুলির আলাদা আলাদা গুরুত্বও রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বদিকের দ্বার সিংহদ্বার, যেখান দিয়ে ভক্তরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন। আর মন্দিরের উত্তরের দ্বার হল হস্তীদ্বার। সেই দ্বার দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন স্বয়ং দেবতাগণ। শুধু দ্বার নয়, আলাদা সময়ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে মর্তবাসী ও দেবগণের জন্য। দিনের বেলা সাধারণ মর্ত্যবাসী তাঁদের অভাব-অভিযোগ জানাতে আসেন জগন্নাথদেবকে আর রাতে আসেন দেবতারা। পুরীর মন্দিরে বসেই, দেবগণের থেকে দেবলোকের দৈনন্দিন কাজকর্মের হিসেব নেন খোদ জগন্নাথদেব। এভাবেই নাকি, বিশ্ব চরাচরের স্থিতি বজায় রেখে চলেছেন তিনি।
এমনই একবার জগন্নাথ দেবের সঙ্গে দেখা করতে আসেন দেবরাজ ইন্দ্র। ফেরার পথে, ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য তিনি গিয়েছেন কাছের এক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। কিন্তু খাদ্য গ্রহণ করার পর বিক্রেতা যখন দাম চেয়ে বসলেন, ইন্দ্র তো পড়লেন মহা বিপদে। তিনি বলেন যে তিনি দাম দিতে অপারগ। তিনি জগন্নাথ দেবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁর কাছে কোনও অর্থই নেই তখন। বিক্রেতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি কোথা থেকে এসেছেন এবং তাঁর পরিচয়ও জানতে চান। দেবরাজ নিজের পরিচয় দেন এবং বলেন যে তিনি স্বর্গ থেকে এসেছেন। এরপর ইন্দ্র বিদায় নিলে ওই বিক্রেতা তাঁর পিছু নেন। ইন্দ্রের পিছু পিছু গিয়ে ওই বিক্রেতা দেখেন, গঙ্গাতীরের একটি অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি জায়গায়, একটি বিশালাকার রথ অপেক্ষা করে আছে। তাঁর সামনেই দেবরাজ তাতে চড়লেন এবং সেই রথ মুহূর্তে মাটি ছেড়ে আকাশপথে রওনা দিল। দোকানি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল। তাঁর বিশ্বাস হল এই স্থানই স্বর্গে যাওয়ার পথ। আর সেই বিশ্বাস থেকেই এই স্থানের নাম হল স্বর্গদ্বার।
আরও শুনুন:
আকারে বহরে টেক্কা দেবে পুরীকেও! বিশ্বের বৃহত্তম রথ কোথায় তৈরি হয় জানেন?
এই বিশ্বাস থেকেই একসময় এইখানে সমুদ্রের ধারে মৃতদেহের সৎকার করা শুরু হয়। সম্ভবত সরাসরি স্বর্গে যাওয়ার বাসনা থেকেই জ্বলে ওঠা চুল্লির শিখা, এই প্রচলিত রীতি মেনেই আজও অনির্বাণ। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে এমনই অনেক জনশ্রুতি ও লোকবিশ্বাস ছড়িয়ে রয়েছে জনমানসে। মানলে সবই আছে, না মানলে নেই।