কুম্ভকে তীর্থের রাজা আখ্যা দিয়েছিলেন সম্রাট আকবর। বাস্তবে যতই ধর্মের বিরোধ হোক, মেলা প্রাঙ্গণে দেখা মিলবে শিখ থেকে শিব, সকলের। কুম্ভের সঙ্গে যে আখড়ার নাম শোনা যায়, সেখানেই রয়েছে মিলনের বার্তা। কোন আখড়া কীসের প্রতীক? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
জোরকদমে চলছে মহাকুম্ভের প্রস্তুতি। নিরাপত্তায় এতটুকু খামতি রাখতে নারাজ প্রশাসন। আলাদাভাবে নজর রাখা হচ্ছে মেলায় আগত ভক্ত এবং সাধুদের উপর। আনুমানিক ৪০ কোটি মানুষের সমাগম হতে পারে এই মেলায়। তার মধ্যে সাধুর সংখ্যাই হতে পারে কয়েক কোটি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সাধুর দল কি কোনও সংগঠনের অংশ? একেবারেই তাই। এক নয় একাধিক সংগঠনের অংশ এই সাধুরা। যা আখড়া হিসেবে পরিচিত।
স্রেফ হিন্দু দেবতা নয়, আখড়ায় গুরু নানকের অনুগামী তথা শিখ সম্প্রদায়ের অনেকে থাকেন। মোট তিন ভাগে আখড়াগুলিকে বিভক্ত করা যায়, প্রথমেই শিব আখড়া। এই দলে শিবভক্তদের ভিড়। প্রত্যেক সাধুর গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে ত্রিশূল, কেউ কেউ সঙ্গে সঙ্গে জীবন্ত সাপও নিয়ে আসেন। এঁদের আরও একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, প্রত্যেকেই গায়ে ভস্ম মেখে ঘোরেন। এরপর, বৈষ্ণব আখড়া। এঁরা নারায়ণের ভক্ত, গলায় তুলসীমালা দেখে এঁদের চেনা যায়। এবং উদাসীন আখড়া, এঁরাই নানকের অনুগামী। এক্ষেত্রে অস্ত্রধারী সাধুও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও রয়েছে, জুনা আখড়া, নিরজনি আখড়া, মহানির্বাণ আখড়া, অতল আখড়া-সহ আরও অনেক সংগঠন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এঁদের আশ্রম। অনুগামীরাও সেখান থেকেই কুম্ভের উদ্দেশে রওনা দেন। কেউ কেউ পায়ে হেঁটে হাজির হন মেলা প্রাঙ্গণে। উদ্দেশ্য একটাই, পুণ্য মুহূর্তে সঙ্গমে স্নান। তবে সবাই যে একইসঙ্গে স্নান সারেন এমন নয়। আখড়ায় রয়েছে শ্রেণীর ভাগ। অর্থাৎ অভিজ্ঞতার বিচারে কেউ কেউ উচ্চপদে আসীন। এক্ষেত্রেও তিনটি ভাগে সাধুরা বিভিক্ত। সবার উপরে আচার্য মহামন্ডলেশ্বর, ইনিই আখড়ার প্রধান। তারপর মণ্ডলেশ্বর, যিনি আখড়ার যাবতীয় কাজকর্মের দেখাশোনা করেন। এবং শেষে শ্রীমন্ত, এঁরাই সমস্ত কাজ হাতে কলমে কুরে থাকে। গুরুর পদসেবা থেকে রান্না করা, সবই করতে হয় এঁদের। তবে সব কাজেই মিশে থাকে ভক্তিভাব তাই সবটা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় বিভিন্ন আখড়ায়।
যদিও মেলার আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে দুটি সম্প্রদায়। এক নাগা সাধুদের দল, এবং কিন্নর আখড়া। নাগা সাধু বলতে সেইসব সন্ন্যাসীদের বোঝায়, যারা পোশাক ছাড়াই মেলায় হাজির হন। আবরণ বলতে ভস্ম এবং নরমুণ্ড। এঁরা অস্ত্রধারী। মাথায় বিশাল জটা। মেলাপ্রাঙ্গণে বিভিন্ন জাদু কৌশল দেখিয়ে বেড়ান এঁরা। আর সেই কারণেই এঁদের দেখতে অনেকে ভিড় জমান। কিন্নর আখড়া বৃহন্নলাদের জন্য নির্দিষ্ট। রাজকীয়ভাবে সেজে এঁরা হাজির হন মেলায়। কেউ কেউ রথে চড়ে আসেন। এঁদের চারপাশেও কোম ভিড় হয় না। সবমিলিয়ে কুম্ভমেলাকে জমজমাট করে তোলেন এই আখড়ার সদস্যরাই।