ভারতীয় সাধুদের ক্ষেত্রে প্রায় সবারই কণ্ঠে থাকে রুদ্রাক্ষের মালা। কোনও নির্দিষ্ট ধর্মমত বা পন্থীর সাধকরাই যে তা ব্যবহার করেন, এমনটা নয়। রুদ্রাক্ষ ধারণ সনাতন ধর্মাচরণের সঙ্গেই ওতপ্রোত মিশে গিয়েছে। কিন্তু কেন সাধকরা রুদ্রাক্ষ ধারণ করতেন? কী ফল মেলে এতে? আসুন শুনে নিই।
সনাতন ধর্মাবলম্বী সাধকদের কাছে রুদ্রাক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। মনে করা হয়, সমস্ত মালার মধ্যে রুদ্রাক্ষের মালাই শ্রেষ্ঠ। রুদ্রাক্ষ মাথায় রেখে যদি কেউ নিয়মিত স্নান করেন, তবে গঙ্গাস্নানের মতোই পুণ্য হয়। দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় ফল এই রুদ্রাক্ষ, ভারতীয় সাধনপথের ধারায় বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে।
আরও শুনুন: পুজোর সময় কেন আরতি করা হয়? কী এর তাৎপর্য?
কী করে তৈরি হল এই রুদ্রাক্ষ? এর জন্মকাহিনিতে মিশে আছে স্বয়ং মহাদেবের প্রসঙ্গ। কথিত আছে, একবার ধ্যান থেকে উঠে এই চরাচরকে প্রাণভরে দেখছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। দেখতে দেখতে হঠাৎ দু-চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল দু-ফোঁটা জল। সেই জল এসে পড়ল মাটিতে। আর তা থেকেই জন্ম নিল একটি বৃক্ষ। মহাদেবের আর-এক নাম রুদ্র। রুদ্রের অক্ষি থেকে এই ফলের জন্ম বলেই এর নাম হল রুদ্রাক্ষ। আবার বলা হয়, ত্রিপুরাসুরের সঙ্গে দেবাদিদেবের যুদ্ধ হয়েছিল বহু বছর ধরে। তাতে মহাদেবের নয়ন ক্রমে রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে। আর চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। প্রজাপতি ব্রহ্মা তখন সেই অশ্রুকে বৃক্ষে রূপান্তরিত করেন। সেই বৃক্ষই হল রুদ্রাক্ষ। এই কাহিনি আমাদের জানায়, ভগবান শিবের সঙ্গে যোগ আছে রুদ্রাক্ষের। তাই শিবের প্রিয় ফল বলা হয় রুদ্রাক্ষকে।
আরও শুনুন: স্বর্গের সিংহাসন পেয়েও কেন পতন হয়েছিল রাজা নহুষের?
বহু রকমের রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায়। একমুখী থেকে একুশমুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষ মেলে পৃথিবীতে। রুদ্রাক্ষ ধারণেরও নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। জন্ম বার এবং জন্ম মাস অনুযায়ী পৃথক পৃথক রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে হয়।
একমুখী রুদ্রাক্ষকে তুলনা করা হয় সাক্ষাৎ মহাদেবের সঙ্গে। বিরল প্রকৃতির এই রুদ্রাক্ষ ধারণে আধ্যাত্মিক উন্নতি তো হয়ই, পাশাপাশি দেবী লক্ষ্মীরও কৃপালাভ হয়। দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ আবার শিব ও শিবার প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে অন্যান্য ফলের পাশাপাশি সাংসারিক সম্পর্ক অর্থাৎ স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। শুধু তাই নয় কাজের জায়গায় উন্নতি থেকে শুরু করে আর্থিক বিষয়ে সমৃদ্ধি – সব দিক থেকেই ফল দেয় এই দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ। যে রুদ্রাক্ষের তিন মুখ, তার তুলনা করা হয় অগ্নির সঙ্গে। অগ্নি যেমন সবকিছুকে দহন করে, তেমনই এই রুদ্রাক্ষও সকল পাপ নাশ করে। ধারণকারীর অসুখ-বিসুখ দূর করা থেকে সার্বিক সমৃদ্ধি সম্ভব হয় এর প্রভাবে। এইভাবেই চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণে মেলে চতুর্বর্গ ফল। আবার মনে করা হয়, পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষে পঞ্চদেবতার বাস।
বাকি অংশ শুনে নিন।