মঙ্গলবারের পাশাপাশি শনিবারও বজরংবলীর পুজো করা হয়। আসলে শনিদেবের সঙ্গে হনুমানজির একরকমের যোগাযোগ আছে। তার নেপথ্যেও আছে এক কাহিনি।
হিন্দুধর্মে বার মেনে দেবতার পূজা করার রীতি বহুদিনের। এক একটা দিন একজন দেবতার অর্চনার জন্য উৎসর্গ করা হয়। যেমন সোমবার করা হয় দেবাদিদেব মহাদেবের পূজা। বুধবার হয় সিদ্ধিদাতা গণেশের আরাধনা। আবার বৃহস্পতিবার হল মা লক্ষ্মীর উপাসনার দিন। শুক্রবার শক্তি আরাধনার তিথি। দেবী দুর্গা, সন্তোষী মায়ের পুজো করা হয় এইদিন। শনিবার – এই নাম থেকেই বোঝা যায় এটি শনিদেবের আরাধনার দিন। আর, রবিবার নামের ভিতরও মিশে আছেন সূর্যদেব। সেদিন তাঁর পূজো করাই রীতি। এই পরম্পরা মেনে মঙ্গলবার কোন দেবতার পুজো করা উচিত? যে কোনও দেবতার পুজো করলেই তো মঙ্গল হয়। সেই নিরিখে এই দিনটিতে যে কোনও দেবতারই উপাসনা করা যায়। মা মঙ্গলচণ্ডী বা বিপত্তারিণী দেবীর পুজো এদিন করে থাকেন অনেকেই। তবে বিশেষ করে মঙ্গলবার নির্দিষ্ট হয়ে আছে বজরংবলী বা সংকটমোচনের পুজোর দিন হিসাবে।
আরও শুনুন – মা লক্ষ্মীর অভিশাপেই মৃত্যু রাবণের, কেন অভিশপ্ত হয়েছিলেন লঙ্কেশ্বর?
বজরংবলী বা হনুমানজি হলেন শ্রীরামচন্দ্রের পরম ভক্ত। তাঁর মতো ভক্তের দেখা ভূ-ভারতে মেলে না। আরাধ্যের প্রতি তাঁর যে আনুগত্য ও সমর্পণ, তা যে কোনও ভক্তই চান আয়ত্ত করতে। আর তাই হনুমানজির পুজো করে থাকেন ভক্তজন, তাঁর অক্ষয় কৃপা লাভের জন্য। বলা হয়, তাঁর ভজনা করলে স্বয়ং রামচন্দ্রও খুশি হন। তবে মঙ্গলবারই যে হনুমানজির পুজো হয়, তার নেপথ্যে একটি কারণ আছে। এটি হল বজরংবলীর জন্মবার। চৈত্রমাসের কোনও এক পূর্ণিমায় মঙ্গলবারেই জন্ম হয় অঞ্জনিপুত্রের। তাই অন্য দিন বজরংবলীর ভজনা করলেও, মঙ্গলবার দিনটিকে তাঁর পুজোর জন্য শুভ বলে বিবেচনা করা হয়।
আরও শুনুন – সোমবার শিবের উপাসনার দিন, এর নেপথ্যে আছে কোন গল্প?
আবার মঙ্গলবারের পাশাপাশি শনিবারও বজরংবলীর পুজো করা হয়। আসলে শনিদেবের সঙ্গে হনুমানজির একরকমের যোগাযোগ আছে। তার নেপথ্যেও আছে এক কাহিনি। কথিত আছে, একবার নয়টি গ্রহকেই বন্দি করেছিলেন লঙ্কেশ্বর রাবণ। ছেলেকে অমিত শক্তির অধিকারী করার জন্য একসময় কঠোর তপস্যা করেছিলেন তিনি। কিন্তু দেবতারা কিছুতেই সে শক্তি দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাঁরা জানতেন, এই শক্তি পেলে তার অপব্যবহার করবেন রাক্ষসরাজ এবং তাঁর পুত্র। এদিকে তপস্যা সত্ত্বেও ফল না মেলায় দেবতাদের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন রাবণ। তখন ছলনা করে তিনি নটি গ্রহকে বন্দি করে গোপনে লুকিয়ে রাখেন। অনেকদিন পর মা সীতার খোঁজ করতে করতে হনুমান যখন লঙ্কায় গিয়ে পৌঁছান, তখন এই বন্দি গ্রহদের সন্ধান পান। তৎক্ষণাৎ ভক্ত হনুমান তাঁদের মুক্ত করেন। এরপরই শনিদেব তাঁর উপর প্রসন্ন হন। তিনি বর দেন, যে ভক্ত হনুমানের ভজনা করবেন, তাঁর সকল সংকট দূর হবে। কোনওরকম কু-দৃষ্টি তাঁর উপর পড়বে না। এই কারণেই হনুমানজির আর-এক নাম সংকটমোচন। এবং শনিবার তাঁর উপাসনারও রীতি আছে।
আরও শুনুন – কেন স্বয়ং নারায়ণ জ্ঞানে পুজো করা হয় শালগ্রাম শিলা?
হনুমানজি পরম ভক্ত। তাই তাঁর উপাসনায় বিশেষ জাঁকজমকের প্রয়োজন নেই। লাল ফুল, লাল কাপড় আর গেরুয়া সিঁদুর সহযোগে তাঁর উপাসনা করা হয়। আর জপ করতে হয় শ্রীরামের নাম। বলা হয়, রামনাম জপ করলে হনুমানজি প্রসন্ন হন এবং তখনই তাঁর ভক্তকে আশীর্বাদ করেন। যে কোনও শুভকাজের আগে ‘হনুমান-চালিশা’ পাঠের রীতি তো বহুল প্রচলিত। ভক্ত হনুমান আজীবন তাঁর আরাধ্যের প্রতি অনুগত থেকেছেন। ভক্তির শক্তিতেই তিনি করেছেন বহু অসাধ্যসাধন। তাই তাঁর আরাধনা আসলে ভক্তির শক্তির কাছেই প্রণত হওয়া। নিজের ভিতরের শক্তির জাগরণেই যে সমস্ত দুরূহ কাজ করে ফেলা যায়, সেই কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেন সংকটমোচন হনুমানজি।