মহাপুরুষদের জীবনই হয়ে ওঠে তাঁদের বাণী। কেউ সে-কথা মুখে বলেন। কেউবা বলেন না। কিন্তু তাঁদের জীবনের দিকে তাকালেই আমরা এই সত্য অনুধাবন করতে পারি। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন সত্যনিষ্ঠার কথা। বলতেন, কারোর যদি সত্যে নিষ্ঠা থাকে তবে জগদম্বা তাকে বেচালে পা ফেলতে দেন না। এ-ও শুধু কথার কথা তো নয়। ঠাকুরের জীবনেই আছে সেরকম ঘটনার দৃষ্টান্ত। আসুন আজ সেই কথা শুনে নিই।
“যার সত্যনিষ্ঠা আছে, সে সত্যের ভগবানকে পায়। যার সত্যনিষ্ঠা আছে, মা তার কথা কখনো মিথ্যা হতে দেয় না।” – এ কথা বলতেন ঠাকুর স্বয়ং। এ যেন শুধু ভক্তদের উদ্দেশে বলা কথা নয়। তাঁর পার্ষদ যাঁরা, তাঁরা খেয়াল করেছিলেন, ঠাকুরের নিজের জীবনেই নানা ঘটনায় এই সত্য ফুটে উঠেছে।
আরও শুনুন: মানুষ কি নিজের মন্দ কাজের ভারও ঈশ্বরের উপর চাপাতে পারে?
শম্ভুচন্দ্র মল্লিক ছিলেন ঠাকুরের ভক্ত। ঠাকুর তাঁকে বলতেন, তাঁর একজন রসদ্দার। সে সময় ঠাকুরের প্রায়ই পেটের সমস্যা হত। একদিন শম্ভুচন্দ্র তাঁকে খানিকটা আফিম নিয়ে যেতে বললেন। তারপর দুজনেই গল্পে গল্পে সে কথা ভুলে গেলেন। ঠাকুর যখন শম্ভুবাবুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন, তখন হঠাৎ তাঁর সেই কথা মনে পড়ল। তিনি ফিরে গেলেন শম্ভুবাবুর ঔষধালয়ে। গিয়ে দেখলেন তিনি নেই, তাঁর এক কর্মচারী সেখানে আছেন। ঠাকুর সেই ব্যক্তির থেকেই খানিকটা আফিম নিয়ে আবার ফেরার উদ্যোগ করলেন। কিন্তু যতই এগোন কিছুতেই আর ফেরার পথ পান না। সামনের রাস্তা সব যেন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কোনটা যে পথ কিছুতেই বুঝতে পারেন না। অথচ পিছন দিকে তাকিয়ে দেখলেন, স্পষ্ট রাস্তা দেখতে পাচ্ছেন।
আরও শুনুন: অবতার বলেই গিরিশের বকলমা নিয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ
অনেক ভেবে ঠাকুর বুঝলেন, আফিম তো নেওয়ার কথা শম্ভুবাবুর কাছ থেকে। তিনি তা না করে নিয়েছেন তাঁর কর্মচারীর থেকে। এখানে খানিকটা সত্যের অপলাপ হয়েছে। কেননা শম্ভুবাবুর হুকুম ছাড়াই তাঁর কর্মচারীর থেকে জিনিস নেওয়া হয়েছে। তাতে খানিক দোষও হয়েছে। তাই জগদম্বা তাঁকে কিছুতেই পথ দেখাচ্ছেন না। তিনি ফের ফিরে গিয়ে দেখলেন শম্ভুবাবুর কর্মচারীটিও নেই। ঠাকুর হাঁক দিয়ে আফিম ফেরত দিয়ে দিলেন, আর রাসমণির বাগানে ফেরার রাস্তা ধরলেন। এবার আর কোনও অসুবিধা হল এই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে ঠাকুর বলতেন, “মার উপর সম্পূর্ণ ভার দিয়েছি কিনা? – তাই মা হাত ধরে আছেন। একটুকু বেচালে পা পড়তে দেন না।”
আরও শুনুন: কেন কল্পতরু হয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ?
আরও ঘটনা লক্ষ করেছিলেন ভক্তরা। একবার গোপাল মা ঠাকুরের জন্য ভাত রেঁধে এনেছেন। ভাত কিছু শক্ত থেকে গিয়েছে। ঠাকুর একটু রাগ করে বললেন, এই ভাত কি আমি খেতে পারি? ওর হাতে আর কখনও ভাত খাব না। ভক্তেরা ভাবলেন, ও ঠাকুরের কথার কথা। গোপাল মা-কে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করেন। একটু পরেই এই কথা তিনি ভুলে যাবেন। কিন্তু বাস্তবিক ঘটনা ঘটল আলাদা। এর কিছু পরেই ঠাকুরের কণ্ঠের ক্ষত ধরা পড়ল। ঠাকুর আর শক্ত ভাত খেতেই পারলেন না।
আরও শুনুন: পৃথিবীতে কে আমাদের কাছের মানুষ? উত্তর দিয়েছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ
একদিন মায়ের সঙ্গেও এই ঘটনা ঘটেছিল। ঠাকুর বলেছিলেন, এবার থেকে শুধু পায়সান্ন খাব। মা শুনে বললেন, তা কেন, আমি তোমার জন্য মাছের ঝোল-ভাত রেঁধে দেব। কিন্তু ঠাকুর বললেন, না পায়সান্ন। এ-ও তাঁর অসুস্থ হবার কিছুদিন আগের কথা। এরপর থেকে ঠাকুরকে সত্যিই দুধ, ভাত, বার্লি খেয়ে কাটাতে হয়েছিল। ঠাকুরের মুখের কথার অন্যথা হয়নি। সত্যিই যেন জগদম্বা তাঁর কথা মিথ্যে হতে দেয়নি।
বাকি অংশ শুনে নিন।