মনের মিল যার সঙ্গে হয় তাকে আমরা বলি বন্ধু। সেই কারণেই সকলের সঙ্গে সকলের বন্ধুত্ব হয় না। গুটিকয় মানুষ সত্যিকার বন্ধু হতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বন্ধুত্বের সঙ্গে মনের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। তা সেই মন তো আমাদের নিজস্ব। নিজের মনই কি আমাদের কাছে বন্ধু বা শত্রু হয়ে উঠতে পারে। জ্ঞানীজনরা বলেন, পারে। আর তাই প্রকৃত বন্ধুর খোঁজে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। ভিতরপানে চোখ মেললেই তার দেখা পাওয়া যায়। আসুন আজ শুনে নিই কে আসলে আমাদের বন্ধু কিংবা শত্রু?
কে বন্ধু আর কে শত্রু? এ প্রশ্ন যেমন সহজ, তেমন জটিলও। প্রকৃত বন্ধুর খোঁজ পেতে জীবন কেটে যায়। আবার তেমন করে খুঁজলে হয়তো অল্প আয়াসেই তার সন্ধান মেলে। আসুন একটা গল্প শোনা যাক।
আরও শুনুন: ‘জগৎ তোমার’ – এই মহামন্ত্রে ভক্তদের প্রাণিত করেছিলেন মা সারদা
একবার এক গুরু-শিষ্য চলেছেন ভগবান শিবের মন্দির দর্শনে। পথে একটা ছোট নদী পড়েছে। নদীতে বেশ জল দেখে গুরু খানিক ভাবনায় পড়লেন। কী করে পার হওয়া যায় সেই নিয়ে চিন্তিত। শিষ্যের মন অবশ্য ভয়হীন। তিনি বলছেন, ইষ্টনাম জপতে জপতে ঠিক নদী পেরিয়ে যাওয়া যাবে। ভাবনার কারণ নেই। বলে শিষ্য নদীতে নেমে পড়লেন। গুরুকে ডাক দিলেন। কিন্তু গুরু কিছুতেই মনস্থির করতে পারলেন না। তিনি দাঁড়িয়েই থাকলেন। ওদিকে শিষ্য ভগবানের নাম স্মরণ করে নদী পেরিয়ে যেতে লাগলেন হেঁটে হেঁটে।
আরও শুনুন: গুরুবাক্যে চাই অটল বিশ্বাস, সেরকম বিশ্বাসের খোঁজ মেলে ব্যাসদেবের গল্পে
এবার গুরুর সংবিৎ ফিরল। তিনি ভাবলেন, তাঁরই দেওয়া মন্ত্র জপ করে শিষ্য নদী পেরিয়ে গেল অথচ তিনি পারছেন না! নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলেন। তারপর নেমে পড়লেন নদীতে। কিন্তু নেমে তো পড়লেন, আসলে পড়লেন ঘোর বিপত্তিতে। কিছুতেই শিষ্যের মতো করে নদী পার হতে পারলেন না। জলের মধ্যে পরে গিয়ে প্রায় ডুবে যান আর কী! শিষ্য তা দেখতে পেয়ে দৌড়ে এলেন, আর গুরুকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গেলেন। গুরু ওপারে পৌঁছে খানিকটা সময় নিলেন ধাতস্ত হতে। তারপর শিষ্যকে বললেন, আজ থেকে আমি গুরু নই, গুরু তুই। কেন বললেন? না, গুরু বলছেন, শিষ্য যেভাবে তাঁর মনকে বশ করেছে, গুরু সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেননি। তাঁর মন কোনও না কোনও ভাবে লোভে জারিত। আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। তাই তিনি নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি, যা তাঁর শিষ্য পেরেছে।
বাকি অংশ শুনে নিন।