মানুষ সর্বদা ঈশ্বরলাভে প্রয়াসী। তবু সবার ভাগ্যে তো ঈশ্বরলাভ হয় না। আবার ঈশ্বরলাভে অনেকের দেরিও হয়। ভক্তমনে তাই প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বরলাভে কেন দেরি হয় মানুষের? ভক্তদের সহজ কথায় এর কারণ বুঝিয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ।
একমাত্র মানুষই পারে ঈশ্বরচিন্তা করতে। এখানে মানুষ অন্যান্য সব প্রাণীর থেকে আলাদা। ঠাকুর বলেন, তিনি তো সকল ভূতেই আছেন। তবে মানুষের ভিতর বেশি প্রকাশ। মানুষ কি কম গা? ঈশ্বরচিন্তা করতে পারে, অনন্তকে চিন্তা করতে পারে, অন্য জীবজন্তু পারে না। অন্য জীবজন্তুর ভিতরে, গাছপালার ভিতরে, আবার সর্বভূতে তিনি আছেন। কিন্তু মানুষে বেশি প্রকাশ। যেমন অগ্নিতত্ত্ব সর্বভূতে আছে, সব জিনিসে আছে। কিন্তু কাষ্ঠে বেশি প্রকাশ। রাম তাই লক্ষ্মণকে বলেছিলেন, ভাই, দেখ হাতি এত বড় জানোয়ার কিন্তু ঈশ্বরচিন্তা করতে পারে না। আবার অবতারে বেশি প্রকাশ। রাম লক্ষ্মণকে বলেছিলেন, ভাই, যে মানুষে দেখবে ঊর্জিতা ভক্তি; ভাবে হাসে কাঁদে নাচে গায়, সেইখানেই আমি আছি।
আরও শুনুন: Spiritual: জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানা সত্ত্বেও আমাদের মোহমুক্তি ঘটে না কেন?
এই যদি মানুষের মহত্ব, ভক্তমনে স্বাভাবিক প্রশ্ন ঢেউ দিয়ে ওঠে, তাহলে ঈশ্বরলাভে এত দেরি হয় কেন? কেন কোনও কোনও মানুষ তাঁর কাছে পৌঁছাতে এত দেরি করে ফেলেন? ঠাকুর এর উত্তরে বললেন, কী জানো, ভোগ আর কর্ম শেষ না হলে ব্যাকুলতা আসে না। বৈদ্য বলে দিন কাটুক – তারপর সামান্য ঔষধে উপকার হবে। এরপর ঠাকুর যেমন বলে থাকেন, তেমন গল্পে গল্পে বুঝিয়ে দেওয়া শুরু করলেন। বলেন, নারদ রামকে বললেন, রাম! তুমি অযোধ্যায় বসে রইলে রাবণবধ কেমন করে হবে? তুমি যে সেইজন্য অবতীর্ণ হয়েছ। রাম নারদকে জবাব দিলেন, নারদ! সময় হোক, রাবণের কর্মক্ষয় হোক, তবে তাকে বধের উদ্যোগ হবে।
ঠাকুর তাই বলেন, এ সংসার তাঁর লীলা, খেলার মতো। এই লীলায় সুখ-দুঃখ, পাপ-পুণ্য, জ্ঞান-অজ্ঞান, ভালো মন্দ – সব আছে। দুঃখ পাপ – এ সব গেলে লীলা চলে না। চোর চোর খেলায় বুড়িকে ছুঁতে হয়। খেলার গোড়াতেই বুড়ি ছুঁলে বুড়ি সন্তুষ্ট হয় না। ঈশ্বরের ইচ্ছা যে, খেলাটা খানিকক্ষণ চলে। তারপর – ঘুড়ি লক্ষের দুটো একটা কাটে, হেসে দাও মা হাত চাপড়ি।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।