আমাদের যে কোনও কাজ থেকে ‘আমি’ কিছুতেই মোছে না। গীতায় শ্রী ভগবান বলেছেন, ‘মা ফলেষু কদাচন’, কর্ম করে যাও ফলের আশা কোরো না। ভারতীয় অধ্যাত্ম শাস্ত্র বলে যে কোনও কাজকে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করার শিক্ষাই হচ্ছে কর্মযোগ। কিন্তু কীভাবে সেই যোগ আমরা প্রাত্যহিক জীবনে পালন করতে পারব! শোনাচ্ছেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
যোগের একটি বিশেষ ধরন হল ক্রিয়াযোগ। যোগ ক্রিয়ার পথে নানা অন্তরায় আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়। সেই অন্তরায়গুলি জয়ের পদ্ধতি বলা রয়েছে যোগদর্শনের দ্বিতীয় পাদে।
তপস্যা, স্বাধ্যায়, ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণ এই হলই ক্রিয়াযোগের মূল কথা। ক্রিয়াযোগ বা কর্মযোগ একই বস্তু। যার অর্থ, কাজ করা। কোনওরকম কাজ না করে শরীর যাত্রা নির্বাহ হয় না, এই হল কর্মযোগের শিক্ষা। কাজ তো নানাবিধ। সে কায়িক বা মানসিক দুইই হতে পারে। এখন কথা হল কাজ করে মানুষের সাধনা, ঈশ্বরলাভ বা নেহাত চিত্তশুদ্ধি হবে কি করে?
আরও শুনুন – Spiritual: মানুষ ভক্তির পথে কীভাবে অগ্রসর হবে?
দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা করি সেটা ঈশ্বর লাভের পথে সহায়ক হওয়া চাই। যারা গৃহস্থসংক্রান্ত কাজ করেন, ধরুন ঘর ঝাঁট দিচ্ছেন, বাসন মাজছেন, কাপড় কেচে মেলে দিচ্ছেন, বাগান পরিষ্কার করছেন, রান্না করছেন, সেইগুলিকেও মনে করতে হবে, ঈশ্বর উপাসনা। সেগুলোকে কীভাবে আরও ঈশ্বরের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়, কর্মযোগ সেই শিক্ষা দেয়। ভালো, মন্দ, সমস্ত কাজ এবং কাজের ফলাফল ঈশ্বরকে সমর্পণ করতে হবে। একেই বলে ‘ঈশ্বরপ্রণিধান’ বা ঈশ্বরের প্রতি ফল সমর্পণ।
স্থূল প্রবৃত্তি ত্যাগ করে, চৈতন্যকে শুদ্ধ করতে হবে। এর নাম তপস্যা।
আরও শুনুন – Spiritual: নিষ্ঠার সঙ্গে যিনি কাজ করেন তিনিই মহৎ ব্যক্তি
আমাদের প্রবৃত্তিকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না। ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তির অন্ধ অনুসরণও করা যাবে না। ইন্দ্রিয় লাগামছাড়া হলেই সেখান থেকেই সমস্যার আগমন। বাইরের প্রলোভন থেকে ইন্দ্রিয়কে সংযত করাই তপস্যা। ইন্দ্রিয় যে কাজে আমাদেরকে লোভ দেখাচ্ছে বা চালিত করতে চেষ্টা করছে সেই কাজে লাগাম পরানো। এই বিষয়ে উপনিষদ্-এ বলেছে,
জীবাত্মাকে রথী এবং শরীরকে রথ বলে জানা উচিত। বুদ্ধিকে বিবেচনা করবে সারথি রূপে। মনকে জানবে লাগাম হিসেবে। ইন্দ্রিয়গুলি এই রথের অশ্ব আর ইন্দ্রিয়ের লালসা-এর গমনের পথ। জ্ঞানীরা বলেন, শরীর, ইন্দ্রিয়, মন এই ত্রিবিধযুক্ত জীবাত্মা আসলে ভোগের কর্তা।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।