ধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয় আত্মত্যাগের। পরহিতে নিজেকে উৎসর্গ করার থেকে বড় কাজ আর হতে পারে না। কিন্তু এই কথাটুকু মুখে বলা যত সহজ কাজে করা ততটাই কঠিন। আমাদের পুরাণ তাই গল্পের ছলে জানিয়ে গেছে আত্মত্যাগের মহিমা। তাই আমরা পেয়েছি মহর্ষি দধীচির উপাখ্যান। আসুন আজ শুনে নিই সেই গল্প।
ধর্ম আমাদের জীবনকে উন্নত করতে নানা আদর্শ অনুসরণ করতে বলে। সেই গভীর কথা নিশ্চয়ই আমরা অনুসরণ করব। কিন্তু বুঝব কী করে তার মাত্রা কতখানি হতে পারে! যদি বলা হয়, পরহিতে আত্মত্যাগেই জীবনের মহিমা ফুটে ওঠে, আমরা এ কথা বুঝতে পারি ঠিকই। কিন্তু সেভাবে উপলব্ধি করতে পারি কি, এই কথার গভীরতা ঠিক কতখানি। ঠিক সেই উপলব্ধিতে আমাদের পৌঁছে দিতেই আছে পুরাণের উপাখ্যান। আত্মত্যাগের মহিমা বর্ণিত হয়েছে মহর্ষি দধীচির গল্প।
আরও শুনুন: ‘বিদ্রোহী ভৃগু’ কেন ভগবানের বুকে এঁকে দিয়েছিলেন পদচিহ্ন?
এককালে বৃত্রাসুর নামে এক অসুর হয়ে উঠেছিল প্রবল পরাক্রমশালী। তার প্রতাপে দেবতারা এক সময় অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। কিন্তু এই অসুরকে সহজে পরাস্ত করা যায় না। অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাল যে স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রের প্রাণসংশয় দেখা দিল। নাকাল দেবতারা তখন অসুরের সঙ্গে সন্ধি করার চেষ্টা করলেন। চতুর অসুর সন্ধিতে রাজি হল। তবে প্রস্তাব দিল, দেবতাদের প্রচলিত কোনও অস্ত্রে, শুকনো বা আর্দ্র অস্ত্রে, দিনে বা রাতে তাকে হত্যা করা যাবে না। এতে সন্ধি হল বটে, তবে দেবতাদের সকল অস্ত্রই একেবারে ক্ষমতাহীন হয়ে গেল।
আরও শুনুন: Spiritual: প্রকৃত সাধু চেনা যায় কোন উপায়ে? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন…
এদিকে অসুরের অত্যাচার যখন কিছুতেই কমল না, তখন দেবতারা প্রমাদ গুণলেন। বুঝলেন, নতুন অস্ত্রের দরকার। কিন্তু কোথায় নতুন অস্ত্র? অনেক ভেবে ঠিক করা হল, কোনও তেজস্বী ঋষি যদি তাঁর অস্থি দান করেন তবে তা থেকে নির্মিত হতে পারে নয়া অস্ত্র। এসে পড়ল শিব ভক্ত ঋষি দধীচির নাম। যেমন তাঁর সাধনার বল, তেমনই তাঁর দৈহিক শক্তি। বলা হয়, এই ঋষির নামের অর্থ হল যার শরীরের পুষ্টি দধি থেকে এসেছে। দেবতারা যখন ঋষির কাছে নিজেদের বিপদের কথা জানালেন, তখন ঋষি এক মুহূর্ত ভাবলেন না। দেবতাদের হিতার্থে নিজের অস্থি দান করবেন সিদ্ধান্ত নিলেন।
এই ঋষি দধীচির হাড় থেকে যে অস্ত্র তৈরি হয়েছিল তাইই হল ইন্দ্রের বজ্র। এই বজ্র দিয়েই বৃত্রাসুরকে বধ করেছিলেন ইন্দ্র। তবে এ গল্প আমাদের অন্য শিক্ষা দেয়। জানায়, সমগ্রের হিতের প্রেক্ষিতে নিজের জীবন বড় নয়। বরং সেই জীবনই মহৎ, যা বহুজনের জীবন রক্ষা করতে পারে। সামগ্রিক মঙ্গল ডেকে আনতে পারে। পরহিতের আত্মত্যাগের মহৎ শিক্ষা এভাবেই দিয়ে যায় আমাদের ধর্ম।