বিষয় বিষ থেকে আমাদের মন সহজে সরতে চায় না। ঈশ্বরের দিকে যতই আমরা নিজেদের দৃষ্টি ঘোরাই, ততই যেন পিছু টেনে রাখে কামিনী-কাঞ্চন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এই নিয়ে চমৎকার একটা গল্প বলেছিলেন ভক্তদের।
সেবার কেশব সেন এসেছেন ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে। সঙ্গে আরও কেউ কেউ ছিলেন। কথায় কথায় বেশ রাত হয়ে গেল। প্রায় রাত দশটা বাজে। কেউ কেউ বললেন, সকলে মিলে আজ বরং এখানেই থেকে যাওয়া যাক। কেশববাবুর অবশ্য অন্য মত। তিনি বললেন, তাঁর কাজ আছে, তাই চলে যেতে হবে। সেই শুনে ঠাকুরের মুখে ফুটে উঠল হাসি। তিনি তখন বললেন, আঁশচুপড়ির গন্ধ না হলে কি ঘুম হবে না?
আরও শুনুন: Spiritual: পাপ-পুণ্য আছে না নেই? ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন…
সকলেই তাকালেন ঠাকুরের দিকে। ব্যাপারটা কী? কেন ঠাকুর এমন কথা বললেন? ঠাকুর তখন শোনালেন গল্প। বললেন, একজন মেছুনী মালীর বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছিল। মাছ বিক্রি করে আসছে। চুপড়ি হাতে আছে। তাকে ফুলের ঘরে শুতে দেওয়া হল। অনেক রাত পর্যন্ত ফুলের গন্ধে গন্ধে ঘুম হচ্ছে না। বাড়ির গিন্নি সেই অবস্থা দেখে বললে, কিগো তুই ছটফট করছিস কেন? সে বলল, কে জানে বাবু, বুঝি এই ফুলের গন্ধে ঘুম হচ্ছে না। আমার আঁশচুপড়িটা আনিয়ে দিতে পারো? তাহলে বোধহয় ঘুম হতে পারে। শেষে আঁশচুপড়ি আনাতে জলের ছিটে দিয়ে নাকের কাছে রেখে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোতে লাগল।
ঠাকুরের মুখে এমন সরস গল্প শুনে উপস্থিত সকলেই তো হো হো করে হাসছেন। আসলে গল্পে গল্পে ঠাকুর বলে দিলেন, কামিনী-কাঞ্চন হচ্ছে এই আঁশচুপড়ি। যার গন্ধ ছাড়া বিষয়ী লোকের ঘুম হয় না। তাকে যদি ফুলের গন্ধের মধ্যে রাখা হয়, তবু সে সেই আঁশচুপড়িই ফিরে যাইবে। ফুলের গন্ধ হল ঈশ্বরচিন্তা বা সাধুসঙ্গ। অর্থাৎ, ঠাকুর বলতে চাইলেন, সাধুসঙ্গ থেকে আমাদের মন সদাই পালাই পালাই।
আরও শুনুন: Spiritual: গৃহস্থের চঞ্চল মন শান্ত হবে কী করে? উপদেশ দিয়েছিলেন ঠাকুর ও শ্রীশ্রীমা সারদা
কেশববাবু আর তাঁর সঙ্গের লোকজনকে ঠাকুর আবার বললেন, দেখো ভগবানই একরূপে ভাগবত হয়েছেন। তাই বেদ, পুরাণ, তন্ত্র- এসব পূজা করতে হয়। আবার একরূপে তিনি ভক্ত হয়েছেন। ভক্তের হৃদয় তাঁর বৈঠকখানা। বৈঠকখানায় গেলে যেমন অনায়াসে বাবুর দেখা পাওয়া যায়, তেমনই ভক্তের পূজাতে ভগবানেরও পূজা হয়। ঠাকুর তাই বললেন, ভাগবত-ভক্ত-ভগবান।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।