সংসারী ভক্তদের ঠাকুর বলতেন বীর ভক্ত। আবার ভক্তকে স্থান দিতেন ভগবানেরও আগে। অবশ্য যদি তিনি সেরকম ভক্ত হন, তবেই। আর, ঠাকুর বলতেন, এই সংসারে থাকতে হয় পিঁপড়ের মতো হয়ে। কেন একথা বলতেন ঠাকুর? আসুন শুনে নিই।
একবার এক পণ্ডিত ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে বলেছিলেন, আপনি মহাত্মা। ঠাকুর বললেন, নারদ, প্রহ্লাদ, শুকদেব – এঁদের মহাত্মা বলতে পারেন। আমি আপনার সন্তানের মতো। তারপর বললেন, তবে এক হিসেবে বলতে পারেন। এমনি আছে যে ভগবানের চেয়ে ভক্ত বড়। কেননা ভক্ত ভগবানকে হৃদয়ে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। ভক্ত মোরে দেখে হীন, আপনাকে দেখে বড়। যশোদা কৃষ্ণকে বাঁধতে গিয়েছিলেন। যশোদার বিশ্বাস, আমি কৃষ্ণকে না দেখলে, তাকে কে দেখবে! কখনও ভগবান চুম্বক, ভক্ত সুচ- ভগবান আকর্ষণ করে ভক্তকে টেনে নেন। আবার কখনও ভক্ত চুম্বক, ভগবান সুচ হন। ভক্তের এত আকর্ষণ যে তার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে ভগবান তার কাছে গিয়ে পড়েন।
আরও শুনুন: ব্রহ্মচারী বলেন ‘এগিয়ে যাও’… এগোলে কী মেলে?
এই ভক্তদের মধ্যে আবার যে ভক্ত সংসারে থাকেন, তাঁকে ঠাকুর বলতেন বীর ভক্ত। কেননা ভগবান বলেন, যে সংসার ছেড়ে দিয়েছে সে তো আমাকে ডাকবেই। আমার সেবা করবেই। তার আর বাহাদুরি কী! সে যদি আমায় না ডাকে তবে সকলে ছি ছি করবে। আর যে সংসারে থেকে আমায় ডাকে – বিশ মন পাথর ঠেলে যে আমায় দেখে সেই-ই ধন্য। সেই-ই বাহাদুর, সেই-ই বীরপুরুষ। এই বলে কথায় কথায় ঠাকুর বলেন সেই ধর্মব্যাধের কথা। বলেন, ধর্মব্যাধের কাছে একজন ব্রহ্মজ্ঞানের জন্য গিয়েছিল। ব্যাধ পশুর মাংস বিক্রি করত কিন্তু রাতদিন ঈশ্বরজ্ঞানে বাপ-মার সেবা করত। ব্রহ্মজ্ঞানের জন্য তার কাছে যে গিয়েছিল সে দেখে অবাক – ভাবতে লাগল এ ব্যাধ মাংস বিক্রি করে, আর সংসারী লোক! এ আবার আমায় কি ব্রহ্মজ্ঞান দিবে। কিন্তু সেই ব্যাধ ব্রহ্মজ্ঞানী।
আরও শুনুন: ‘লোহার তরোয়াল সোনার হলে আর কারও অনিষ্ট করে না’
ঠাকুর তাই সংসারী ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, পিঁপড়ের মতো সংসারে থাকো। এই সংসারে নিত্য অনিত্য মিশিয়ে রয়েছে। বালিতে চিনিতে মিশানো – পিঁপড়ে হয়ে চিনিটুকু নেবে। ঠাকুরের উপদেশ, জলে-দুধে একসঙ্গে রয়েছে। চিদানন্দরস আর বিষয়রস। হংসের মতো দুধটুকু নিয়ে জলটি ত্যাগ করবে।