আমি একটু বড় হওয়ার পর থেকে অনেক বই এনে দেয় বাবা। টিভিতে চালানো থাকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ডিসকভারি, অ্যানিমাল প্ল্যানেট। আমার খুব ভাল লাগে ওগুলো দেখতে। স্কুলে স্যররাও বলেন, ‘রূপক তো খুব প্রমিসিং।’
আমাদের স্কুলে সবারই নানারকম অ-সুখ আছে। সবার অ-সুখগুলোরই নাম আলাদা আলাদা।
আম্মাদের ওখানেও যেমন অনেক বুড়োবুড়ি থাকে। মা আমাকে নিয়ে গেছিল একবার। পুজোর পরে। বিজয়ার প্রণাম করাতে। মা নিজে ঝুঁকে আম্মার পায়ে হাত দিয়েছিল। আমাকে বলেছিল, ‘আম্মাকে প্রণাম করো।’ আমি চেয়ার থেকে ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে আম্মার পায়ে প্রণাম করেছিলাম। পাশের বুড়োবুড়িরা হাসি-হাসি মুখে বলেছিল, ‘এই একমাত্র নাতি? ও হাঁটতে পারে না?’
মা খুব রাগ রাগ মুখে বলেছিল, ‘না, ওর নার্ভের অসুখ।’
‘আহা মুখখানা কী সুন্দর! ঠাকুমা তো কিছু বুঝতেও পারে না।’ একজন মাসি বলেছিল। ওই মাসিই বুড়োবুড়িদের দেখাশোনার দায়িত্বে।
আম্মার খুব সুন্দর একটা ঘর। সবসময়ের জন্য মিনুমাসি আছে, যে আম্মাকে চান করায়, খাইয়ে দেয়। চারপাশে কী সুন্দর বাগান! আমারও ওখানেই থাকতে ইচ্ছে করছিল। মা স্কাইপে বাবাকে কল করেছিল আম্মাকে দেখানোর জন্য। বাবা বলেছিল, ‘মা, চিনতে পারছ? আমি তোমার ছেলে। আমার নাম কী বলো তো?’
আম্মা কিছুই বলেনি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল।
বাবা বলেছিল, ‘আমি অবু। অবু, তোমার ছেলে।’
আম্মা কিছুই বলেনি।
মা চাপা গলায় বলেছিল, ‘শি হ্যাজ লস্ট ইট।’
ঠিক তখনই আম্মা আবার বলছিল, ‘খাব। খিদে।’
মিনুমাসি বলেছিল, ‘খাবেন তো, মাসিমা। আপনার বউমা, নাতি কত মিষ্টি এনেছে দেখুন! এখন খাবেন, না, খাবার পর?’
‘মা, আমরা এখানে থাকতে পারি না একদিন?’
‘তা কী করে হবে, রুপু? এটা শুধু বুড়োবুড়িদের অসুখের বাড়ি। যেসব বুড়োবুড়ির অসুখ হয় তারা শুধু এখানে থাকে।’
‘অসুখের বাড়ি’ কথাটা খুব ভাল লেগেছিল আমার!
শারদীয় সংবাদ প্রতিদিন ১৪২৭-এ প্রকাশিত অপরাজিতা দাশগুপ্ত-এর গল্প ঘুড়ি-এর নির্বাচিত অংশ।
লেখা: অপরাজিতা দাশগুপ্ত
পাঠ: কোরক সামন্ত, মৌমিতা সেন
আবহ: শঙ্খ বিশ্বাস