পুজো শেষ। এবার পালা বিসর্জনের। মায়ের বিদায়েও জাঁকজমক কিছু কম হয় না। নাচ, গান হুল্লোড়ে মেতে ওঠে সবাই। কিন্তু বিসর্জনের সময় এইভাবে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ শাস্ত্রসম্মত? দেবী কি আদৌ পছন্দ করেন এই হুল্লোড়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন…
প্রচলিত কথা। অনেকে বলেন বিসর্জনের সময় এই ছন্দেই ঢাক বাজে। তালে তালে মেতে ওঠে সবাই। কোনও নিয়ম নেই। ব্যাকরণও নেই। স্রেফ মনের আনন্দে নাচ করলেই হল। ঢাকের তালে কোমর দুলিয়ে খুশিতে মেতে ওঠাই আসল কথা। প্রতিবছর বিসর্জনের সময় এই ছবি চেনা। তবে এমনটা কি আদৌ বিধিসম্মত?
দুর্গাপুজো বাঙালির আবেগের উৎসব। তাই বলে এতে নিয়মের ঝক্কি নেহাতই কম নয়। চারদিন নিষ্ঠাভরে দেবীর আরাধনা করতে হয়। সময়ের হিসাব রেখে বসতে হয় পুজোয়। অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে দশমীতে ঘট বিসর্জন, সবই একেবারে সময় ধরে করার নিয়ম রয়েছে। পঞ্জিকাভেদে সময়ের হিসাব বদলাতে পারে। তবে নিয়মের বাইরে গিয়ে পুজোর উপায় নেই। বাড়ির পুজো তো বটেই, মণ্ডপেও দুর্গা আরাধনায় নিয়ম মানতেই হয়। অন্যথায় রুষ্ট হন দেবী। বোধনে পুজো আরম্ভ, তারপর সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান, অষ্টমীতে কুমারী পুজো, সন্ধিক্ষণে পুজো এবং বলিদান, তারপর নবমীতে হোম। শারদীয়া দুর্গাপুজোয় এই নিয়মই প্রচলিত। তবে দশমীর পুজোও নিয়মের বাইরে নয়। পুরাণ মতে, এই তিথিতে দেবীকে প্রদক্ষিণ করে প্রণাম করা উচিত। বিসর্জনের আগে এমনটা করাই নিয়ম। শাস্ত্র বলছে, বিসর্জনের বিশেষ সময় পূর্বাহ্ন। তার আগে আরতি করতে হয় দেবীর। অনেক জায়গায় মূর্তি দশমীর পর রেখে দেওয়া হয়। শাস্ত্রে এমন নিয়মের উল্লেখ মেলে না। এতো গেল পুজোর কথা। এবার আসি বিসর্জনের প্রসঙ্গে।
শাস্ত্র বলছে, দেবী মূর্তি স্রোতের জলে বিসর্জন দিতে হয়। স্থির জলে বিসর্জন বিধিসম্মত নয়। আর বিসর্জন হতে হবে রাজকীয়তা পূর্ণ। অর্থাৎ আমোদ-প্রমোদ করতে করতেই দেবীকে জলে ভাসান দিতে হবে। সেই অর্থে বিসর্জনের নাচ-গানের কোনও ভুল নেই। বরং এমনটা করলেই তুষ্ট হন দেবী। আবার শাস্ত্রেই বলা হচ্ছে, বিসর্জনের সময় যদি চারদিক নিস্তব্ধ থাকে তবে দেবী দারুণ শাপ দেন। আলো না জ্বালিয়ে বিসর্জনও শাস্ত্রসম্মত নয়। অন্তত দেবীর নামে জয়ধ্বনি টুকু দিতেই হবে। অন্যথায় বিসর্জন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবে বিজয়া দসমীর গুরুত্ব স্রেফ দেবী মূর্তির বিসর্জনের কারণে নয়। এইদিন রাবণ বধ করেছিলেন রামচন্দ্র। সেই অর্থে বিজয়া হল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়ের উৎসব। তাই সেখানে আলো, উল্লাস থাকবে না, এমনটা কি হতে পারে!