পুজোর পর মন্দির পরিক্রমা। এমন নিয়ম অনেক মন্দিরেই থাকে। সাধারণত বিজোড় সংখ্যায় মন্দিরের চারপাশ প্রদক্ষিণ করেন ভক্তরা। খুব বেশি হলে ৫ বা ৭ বার। ব্যতিক্রম এই দুর্গামন্দির। এখানে গুণে গুনে ১০৮ বার মন্দির পরিক্রমার চল রয়েছে। কোন মন্দিরের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পুজো দিলে পূর্ণ হবে মনস্কামনা। এই আশায় মন্দিরে ছোটেন ভক্তরা। স্রেফ পুজো দেওয়া নয়, মন্দিরের চারপাশে পরিক্রমাও করেন অনেকেই। তবে এই দুর্গামন্দিরে এই পরিক্রমাই মূল আকর্ষণ। কারণ ভক্তরা গুনে গুনে ১০৮ বার প্রদক্ষিণ করেন এই মন্দির।
কথা বলছি, নবদুর্গা শক্তি মন্দির সম্পর্কে। এই নামে দেশে আরও অনেক মন্দির থাকতে পারে। তবে যোগীরাজ্যের নবদুর্গা মন্দিরে এই বিশেষ নিয়মের চল রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে পুজো দেওয়ার পর ভক্তরা ১০৮ বার প্রদক্ষিণ করে যান। কমও নয়, বেশিও নয়। নিষ্ঠা ভরে এমনটা করেন সকলে। আর তাতেই নাকি হাতেনাতে ফল মেলে। আকারে এই মন্দির তেমন বড় নয়। কাজেই পরিক্রমা এমন কিছু কঠিন নয়। তবে স্রেফ পরিক্রমা করলেই ফল মিলবে না। আরও একটা কাজ করতে হবে মনে করে। কিছুই না, আলাদা করে ঈশ্বরকে জানাতে হবে নিজের মনের ইচ্ছা। তার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে মন্দিরে। যা আসলে একটা স্তম্ভ। সকলের কাছে যা মনোকামনা স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। ভক্তিভরে তাতে বেঁধে আসতে হবে একটা কাপড়ের টুকরো বা লাল সুতো। বাঁধার সময় মনে মনে বলতে হবে ঠিক কী প্রয়োজন। বিপদে পড়লে তার থেকে যেন উদ্ধার করেন দেবী, সেকথাও জানানো যেতে পারে। বিশ্বাস, এমনটা করলে ফল মিলবেই। হাতেনাতে প্রমাণও পেয়েছেন বলে দাবি করেন অনেকে।
মন্দিরের বিগ্রহও বিশেষ। দেবীর ভগবতী রূপ ধরা পড়ে মূর্তিতে। বিগ্রহ অষ্টধাতুর তৈরি। যার ওজন প্রায় ৪ টন। লম্বায় ১৪ ফুট চওড়ায় ১১ ফুট এই মূর্তিটি ২৭ টি খণ্ডে বিভক্ত। যা বিশেষ কায়দায় জোড়া। অনেকে বলেন, এমন মূর্তি ভূ ভারতের আর কোথাও নেই। দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী গণেশদের দেখা যায় না। এমনকি নেই কোনও সখীও। বদলে হনুমান এবং ভৈরবের মূর্তি রয়েছে বিগ্রহের দুই পাশে। এছাড়া শিব এবং গণেশের মূর্তিও রয়েছে এই মন্দিরে। এমনিতে বাংলার বাইরে যে দুর্গা মূর্তি দেখা যায় তাতে সন্তান শ দেবীর অধিষ্ঠান বিরল। বেশিরভাগ জায়গাতেই দেবী অম্বা হিসেবে পূজিতা। সেখানে দেবীর বাহন সিংহের বদলে বাঘ। দেবীড় অস্ত্রও খানিক আলাদা। এমনকি অসুরও নেই। নবরাত্রি উৎসবে দেবীর যে বিগ্রহ প্রচলিত, তাও এই ধাঁচেই করা। যোগীরাজ্যের অধিকাংশ দুর্গামন্দিরে এমন মূর্তি রয়েছে। ব্যতিক্রম নয় এই নবদুর্গা মন্দিরের বিগ্রহ। প্রতি বছর নবরাত্রির সময় এখানেই ভিড় জমান ভক্তরা। তবে পরিক্রমার জন্য বছরভর মন্দিরে হাজির হন অনেকেই।