মন্দিরে রয়েছে অনির্বাণ জ্যোতি। হাজার চেষ্টা করেও যা নেভানো সম্ভব হয়নি। ভক্তরা সেই অগ্নি শিখার তাপ নিয়েই দেবীর আশীর্বাদ পান। খোদ মুঘল সম্রাট আকবরও ভক্তিতে মাথা নুইয়েছিলেন দেবী দুর্গার সামনে। মন্দিরে একসময় পুজোদ দিয়েছিলেন পাণ্ডবরাও। কোন মন্দিরের কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এ দেশে শক্তি মন্দিরের কমতি নেই। তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি মন্দির শক্তিপীঠ হিসেবে পরিচিত। এই মন্দিরও এমনই এক শক্তিপীঠ। কথিত আছে এখানে সতীর জিভ পড়েছিল। তবে স্রেফ সেই কারণে নয়, মন্দিরের জনপ্রিয়তার নেপথ্যে রয়েছে আরও অনেক কিছু।
কথা বলছি জ্বালামুখী মাতার মন্দির সম্পর্কে। হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকায় অবস্থিত এই মন্দির। এখানেই রয়েছে অনির্বাণ জ্যোতি। একটা নয়, সাত-সাতটি। ভক্তদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমেই যেন ছুঁয়ে দেখা যায় সতী তথা জ্বালামুখী মাতাকে। দেবী এখানে সিদ্ধিদা বা অম্বিকা রূপে পূজিতা। তবে সাত জ্যোতির রয়েছে সাত বিশেষ নাম। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী সাত রূপে এখানে পূজিতা। বিন্ধ্যবাসিনী, হিঙ্গলাজ মাতা, অন্নপূর্ণা, মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহাসরস্বতী, ও অম্বিকা। শিব এখানে উন্মত্ত। কথিত আছে অনেক রাজাই নাকি অবিশ্বাস করে এই অখণ্ড জ্যোতি নেভানোর চেষ্টা করেছেন। অখণ্ড জ্যোতি ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য নিকটবর্তী ঝরনার জলকে আটকে রাখা হয়েছিল। সেই বাঁধ দেওয়া জলাশয় আজও রয়েছে এখানে, গৌরীকুণ্ড নামে। মন্দিরের দর্শনার্থীরা কুণ্ডটিও দেখতে যান। তবে এত কিছুর পরও অগ্নিশিখা অনির্বাণ থাকায় সকলেই নতমস্তকে ওই মন্দিরে, ওই জ্যোতির মাধ্যমে দেবী জ্বালামুখীর অস্তিত্ব মেনে নেন। এমনকি খোদ মুঘল সম্রাট আকবর দেবীর অস্তিত্ব টের পেয়েছিলেন এই মন্দিরে। সম্রাট আকবরের প্রধানমন্ত্রী ও জীবনীলেখক, আবুল ফজলের আইন-ই -আকবরীতেও জ্বালামখীর পূর্ণ জ্যোতির উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সেই আগুনের রহস্য কেউ উদ্ধার করতে পারেননি।
শোনা যায়, মন্দিরে এসেছিলেন পাণ্ডবরাও। আসলে, পাহাড়ের গায়ে চারটি গম্বুজের উপর তৈরি দেবী অম্বিকার এই মন্দির। কথিত আছে, প্রায় ৬ হাজার বছর আগে পাণ্ডবরা তাদের বনবাসের সময় এটিকে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দেখে ভালোভাবে নির্মাণ করেন। এখন অবশ্য মন্দিরের দেওয়াল শ্বেতপাথরের কারুকাজ করা আর চূড়া সম্পূর্ণ সোনা নির্মিত। ইতিহাস বলছে, মন্দিরের ওপরের সোনার অংশ রাজা রণজিৎ সিংহের দান। তবে এই অনির্বাণ জ্যোতি বর্তমান বিশ্বের কাছেও রহস্যই। সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর আত্মজীবনী ‘তুজকু-ই-জাহাঙ্গীরি’তে লিখেছেন – ‘পাহাড়ের ঢালু গায়ে গন্ধকের আকর আছে। তার উত্তাপে অগ্নিশিখার সৃষ্টি হয়। এবং অনবরত তা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলেছে।’ এই কথা কতটা সত্যি তা যাচাই করতে জ্বালামুখী অগ্নিকুণ্ডে একাধিকবার পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়েছে কিন্তু সকলেই বিফল হয়েছেন। সবশেষে তাই বলতে হয় – তিনিই নিত্যশক্তি। জীবনের আদি ও অন্ত তিনিই।