হিন্দু মেয়েদের হাতে মেহেন্দি পরাতে পারবে না কোনও মুসলিম পুরুষ। উৎসবের আবহেই কড়া ফতোয়া যোগীরাজ্যে। ‘লাভ জিহাদ’ রুখতেই এহেন সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বজরং দলের। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
গরবা নাচের আসর থেকে দিওয়ালির উদযাপন, এই উৎসবের মরশুমে বারে বারেই হিন্দু আর মুসলিমের মধ্যে বেড়া টানতে তৎপর হিন্দুত্ববাদীরা। সেই প্রবণতায় এবার নয়া ইস্যু হয়ে দাঁড়াল মেহেন্দি। করবা চৌথের আবহে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাফ নির্দেশ, হিন্দু মেয়েদের হাতে মেহেন্দি পরাতে পারবে না কোনও মুসলিম পুরুষ। জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে এগারোটি মেহেন্দি শিবিরের আয়োজন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল ও রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি। আর সেই আসরে যে কোনও মুসলিম যুবকের প্রবেশ নিষেধ, সে কথা আগেভাগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী শিবির। হিন্দু মেয়েদের সুরক্ষার কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এমনটাই দাবি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের গোরক্ষা কমিটির এক প্রধানের। দুবছর ধরেই হিন্দু মেয়েদের সুরক্ষিত রাখার যে প্রকল্প তাঁরা নিয়েছেন, এই উদ্যোগকে তারই অংশ বলে জানিয়েছেন ওই নেতা।
আরও শুনুন: জল পর্যন্ত নেই, মুঠো মুঠো ওষুধ খেয়ে পিরিয়ডস পিছোতে মরিয়া গাজার মহিলারা
হঠাৎ সুরক্ষার প্রশ্ন উঠছে কেন? আসলে এই প্রথম নয়, মুসলিম যুবকদের সঙ্গে হিন্দু মেয়েদের মেলামেশা বিপজ্জনক বলে বরাবরই দাবি করে থাকেন হিন্দুত্ববাদীরা। যেখানেই যুবক যুবতীদের কাছাকাছি আসার সুযোগ থাকে, আর সেই চেনাজানার সূত্রে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে, সেই সম্ভাবনাকেই নাকচ করতে মরিয়া হিন্দুত্ববাদীরা। কারণ ভিনধর্মের মধ্যে প্রেম, এবং তারপর বিয়ের ঘটনা ঘটলে প্রায়শই তাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে দাগিয়ে দেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, কোনও প্রেম ভালবাসার টানে নয়, এই বিয়ে নিছকই এক ধর্মীয় চাল। আসলে হিন্দু মেয়েদের ভুলিয়েভালিয়ে বিয়ে করতে চায় মুসলিম ধর্মাবলম্বী পুরুষেরা। তারপর জোর করে মেয়েটির ধর্মান্তর করে এবং তার গর্ভে একাধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য, এমনটাই দাবি হিন্দুত্ববাদীদের। এই দাবি ধরেই আগেও গরবা নাচে মুসলিম যুবকদের প্রবেশে আপত্তি উঠেছিল। এমনকি একাধিক বিজেপি নেতামন্ত্রীকেও দেখা গিয়েছে এ প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করতে। এবার মেহেন্দির আসর প্রসঙ্গেও উঠল সেই একই আপত্তি।
আরও শুনুন: ‘শ্রাদ্ধের সাজ নাকি!’ বিজ্ঞাপনে টিপ নেই মডেলের কপালে, বয়কটের ডাক নামী সংস্থাকে
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ওই নেতার দাবি, অনেক মেহেন্দি শিল্পীই ধর্মে মুসলিম। এহেন আসরকে ধর্মান্তরণের হাতিয়ার বলেই দেখেন তাঁরা, অভিযোগ এমনটাই। ওই নেতার দাবি, নিজেদের পরিচয় গোপন করে হিন্দুদের মতো হাতে পবিত্র সুতো বেঁধে মেহেন্দি পরাতে আসেন ওই মুসলিম যুবকেরা, এবং সেই সুযোগে হিন্দু মেয়েদের সঙ্গে পরিচয় করেন। সেই সূত্রে ফোন নম্বর বিনিময় করে আলাপ গড়ায় প্রেমে। যদিও নিজের দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। তাঁর বক্তব্য, মেয়েরা এগিয়ে এসে অভিযোগ করছে না বলেই মিলছে না প্রমাণও। কিন্তু প্রমাণ মিলুক বা নাই মিলুক, লাভ জিহাদ রোখার জন্য এবার আগেভাগেই সতর্ক হতে চায় হিন্দুত্ববাদী শিবির। তবে তাঁদের এই ধরনের মন্তব্য আসলে সাম্প্রদায়িক বিরোধই বাড়াচ্ছে, এই মর্মে পালটা দিয়েছে মুসলিম দলগুলিও।