রথের পরে উলটোরথ। তবেই রথযাত্রার সমাপ্তি। এই উলটোরথকে ঘিরেও আছে নানা উপাচার এবং কাহিনি। এই সময় জগন্নাথদেবের সোনাবেশ দেখতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন ভক্তরা।
উলটোরথ। মাসির বাড়ি থেকে এবার ঘরে ফেরার সময় হল প্রভু জগন্নাথদেবের। আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ধুমধাম করে রথে চেপে গিয়েছিলেন মাসির বাড়ি বা গুণ্ডিচা মন্দিরে। আর, এই একাদশীতে ফিরবেন শ্রীমন্দিরে।
গুণ্ডিচা মন্দির থেকে দক্ষিণ মুখে শুরু হবে পুনর্যাত্রা। তাই এই যাত্রাকে কেউ কেউ বলে থাকেন দক্ষিণাভিমুখী যাত্রা। স্থানীয়রা আবার একেই বলেন বহুদা যাত্রা। আর সেটাই হল আমাদের উলটোরথ।
শ্রীমন্দির যেন দ্বারকার সিংহাসন। বছরভর সেখানে বসে রাজপাট সামলান দ্বারকাপতি শ্রী কৃষ্ণ। অর্থাৎ, আমাদের প্রভু জগন্নাথ দেব। প্রজাদের যেমন পালন করতেন, তেমনই এখানে রত্নসিংহাসনে বসে পালন করেন ভক্তদের। আর মাসির বাড়ি যাওয়া মানে আসলে যেন তাঁর বৃন্দাবনধামে গমন। এই কদিন তিনি গোপীগণের সঙ্গ করেন। গুণ্ডিচা মন্দিরে শেষ তিনদিন তাঁকে নিয়ে আসা হয় রাসমণ্ডপে। গীতগোবিন্দম আবৃত্তি করে প্রভুর সন্তুষ্টি বিধান করা হয়। তাঁকে শ্রী কৃষ্ণ রূপে কল্পনা করে কৃষ্ণ ও গোপীদের লীলার বর্ণনা করা হয়। তা শ্রবণে তৃপ্ত প্রভু জগন্নাথ যেন বৃন্দাবনের শ্রী কৃষ্ণই হয়ে ওঠেন এই ক-দিন। বৈষ্ণবদের কাছে তাই গুণ্ডিচা মন্দিরই হয়ে ওঠে পবিত্র বৃন্দাবনধাম।
আরও শুনুন: Spiritual: জগন্নাথ বিগ্রহের কী ব্যাখ্যা আছে শাস্ত্রে?
গুণ্ডিচা মন্দিরে প্রভু যখন অধিষ্ঠান করছেন, তখন শ্রী লক্ষ্মী দেবী থাকেন মূল মন্দিরে। এই কদিন দেখা সাক্ষৎ নেই। তবে, প্রচলিত কাহিনি অনুসারে লক্ষ্মীদেবী নাকি এর মধ্যেই এক ফাঁকে গিয়ে দেখে গুন্ডিচায় আসেন জগন্নাথকে। তারপর কিচ্ছুটি না বলে চুপিচুপি শ্রীমন্দিরে ফিরে আসেন ঘুরপথে। এরা নাম ‘হেরা গোহরী’ পথ।
উলটোরথের দিন আবার লক্ষ্মীর সঙ্গে সাক্ষৎ হয় জগন্নাথ দেবের, মূল মন্দিরের সিংহদুয়ারে। দেবী লক্ষ্মীর অলৌকিক বিভায় জগন্নাথ দেব এই বৃন্দাবনের স্মৃতি বিস্মৃত হন। আবার শুরু হয় তাঁর নিত্যকার প্রজাপালনের কাজ।
তবে, মাসির বাড়ি থেকে ফিরেই অবিশ্যি মূল মন্দিরে প্রবেশ করেন না জগন্নাথ দেব। শ্রীমন্দিরে প্রবেশের আগে তিন দিন থাকেন বাইরেই। এই সময় একাদশীতে হয় সোনাবেশ। সারা শরীর সোনার আভরণে ভূষিত হয় তাঁর। এক কুইন্টালেরও বেশি সোনার গহনা এই সময় পরানো হয় জগন্নাথদেবকে। সোনাবেশে প্রভুর ডান হাতে থাকে সোনার সুদর্শন চক্র। বাম হাতে থাকে রূপোর শঙ্খ। বলভদ্রের দুই হাতে থাকে সোনার লাঙল আর সোনার গদা। প্রভুর সোনাবেশ দেখার জন্য কাতারে কাতারে ভক্তের সমাগম হয়। ভাগ্যবানেই দেখতে পায় জগন্নাথ দেবের এই রূপ। এ ছাড়া এই দ্বাদশীতে হয় অধরপনা ও ত্রয়োদশীতে রসগোল্লা উৎসব।
এর মাধ্যমেই সমাপন হয় রথযাত্রার। আবার অপেক্ষা এক বছরের। জগন্নাথ প্রভুর চরণ ছোঁয়ার জন্য সারা বছর উন্মুখ প্রতীক্ষায় আকুল হয়ে থাকেন ভক্তরা।