লাউডস্পিকার বিতর্কের আঁচ এবার পৌঁছে গেল কর্ণাটক পর্যন্ত। লাউডস্পিকারে আজানের বিরোধিতায় রাজ্য জুড়ে হনুমান চালিশা পাঠের ব্যবস্থা করল সেখানকার বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সরকার পদক্ষেপ না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাকও দিলেন তাঁরা। গোটা ঘটনায় দেশ জুড়ে ছড়াতে পারে অশান্তি। আশঙ্কা পুলিশের।
দিন কয়েক ধরেই ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়ে উত্তাল দেশ। বিশেষত মসজিদে লাউড স্পিকার ব্যবহার নিয়েই আপত্তি জানিয়েছে দেশের একাধিক হিন্দুত্ববাদী দল। মহারাষ্ট্রে এ নিয়ে যুযুধান ক্ষমতায় থাকা শিব সেনা ও রাজ ঠাকরের নবনির্মাণ সেনা। মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার বন্ধ না হলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বাসস্থানের সামনে হনুমান চালিশা পাঠের হুমকি দেন রাজ। মুখ্যমন্ত্রীর আবাসস্থলে হনুমান চালিশা পাঠ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন অমরাবতীর নির্দল সাংসদ নভনীত কৌর রানা ও তাঁর স্বামী বাদনেরার বিধায়ক রবি রানা। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়।
তবে যাই হয়ে যাক না কেন, নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে অনড় রাজ ঠাকরের দল। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় হনুমান চালিশা পাঠেরও আয়োজন করেছিল তারা। সেই আন্দোলন যে শুধু মহারাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই আর, তা তো বলাই বাহুল্য। উত্তরপ্রদেশে এ নিয়ে রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করেছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ইতিমধ্যেই বহু মসজিদ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে লাউড স্পিকার। মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশের পর লাউডস্পিকারকে কেন্দ্র করে অশান্তির আশঙ্কা কর্নাটকেও।
আরও শুনুন: শিব সেনার আদর্শ থেকে সরেছেন উদ্ধব! বাল ঠাকরের বক্তৃতা শুনিয়ে তোপ রাজের
দিন কয়েক ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উসকে উঠেছে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আগুন। দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে শুরু করে দেশের একাধিক জায়গা থেকে কানে এসেছে হিংসার খবর। উত্তরপ্রদেশের জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্ক এবং কৃষ্ণজন্মভূমি নিয়ে অশান্তির আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই সতর্কতা অবলম্বন করেছে সে রাজ্যের প্রশাসন। এরই মধ্যে ফের অশান্তির আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে কর্ণাটক জুড়ে। সোমবার সেখানে মসজিদে লাউডস্পিকারের বিরোধিতা করে রাজ্যের বিভিন্ন অংশের বেশ কয়েকটি মন্দিরের সামনে হনুমান চালিসা পাঠ ও ভক্তিমূলক গান বাজানোর সিদ্ধান্ত নেয় সেখানকার একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। মসজিদে আজানের সময় লাউডস্পিকার বাজানোর প্রত্যুত্তর হিসেবেই ওই কাজ করা হয়েছে বলে দাবি শ্রী রাম সেনা-সহ সেখানকার বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী দলের। তাঁদের বক্তব্য, মসজিদে লাউডস্পিকার বাজানো বন্ধ করার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি কর্নাটক সরকার।
সোমবার ভোর পাঁটটায় মাইসুরুর একটি মন্দিরের সামনে অনুষ্ঠান করেন শ্রী রাম সেনার প্রতিষ্ঠাতা প্রমোদ মুথালিক। তাঁর অভিযোগ, প্রতিদিন সকালে লাউডস্পিকারে আজানের শব্দে অসুবিধায় পড়েন বহু অসুস্থ এবং পড়ুয়া। আর তার বিরোধিতা করতেই এই আন্দোলন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি কংগ্রেসের প্রতি তোপ দেগে প্রমোদ জানান, “কংগ্রেসের ইন্ধনেই নিজেদের আইনকানুনের উপরে ভাবতে শুরু করেছেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। মুসলিমদেরকে নিয়ে ভয়ের জায়গাও তৈরি করেছে কংগ্রেসই।” ভবিষ্যতেও এর বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলন চলবে বলেই জানিয়ে দিয়েছেন প্রমোদ।
আরও শুনুন: মসজিদে আজান শুরু হতেই বন্ধ লাউডস্পিকার, সম্প্রীতির নজির গড়ল বিহারের মন্দির
শুধু মাইসুরুতেই নয়, রাজ্যের প্রায় এক হাজারটি মন্দিরে এ দিন হনুমান চালিশা ও সুপ্রভাত প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দেওয়া হয় ‘জয় শ্রী রাম’ ও ‘জয় হনুমান’ স্লোগানও। সেই অনুষ্ঠান চলে সকাল ৬ টা পর্যন্ত। বেঙ্গালুরুর একটি মন্দিরে তাদের সেই কাজে বাধা দেয় পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ায় রাম সেনা কর্মীরা। বেশ কয়েকজন কর্মীকে নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ।
সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা ছড়িয়েছে রাজ্য জুড়েই। সর্বস্তরেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী। দিনকয়েক আগেই হিজাব বিতর্ক নিয়ে অশান্তিতে তেঁতে উঠেছিল কর্ণাটক। লাউড স্পিকার ব্যবহারকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অশান্তি রুখতে তাই আগেভাগেই কোমর বাঁধতে চাইছে স্থানীয় প্রশাসন।