প্রকৃতির খেয়ালে কত কী-ই না ঘটে! সম্প্রতি দেখা গেল তেমনই এক অভিনব ঘটনা। ধু-ধু বালিতে ঢাকা সাহারা মরুভূমির বুকে কিনা খোঁজ পাওয়া গেল বরফের! কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রায়গুণাকর কবি ভারতচন্দ্র তাঁর ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্যে লিখেছিলেন, “শিলা জলে ভাসি যায়/ বানরে সংগীত গায়/ দেখিলেও না হয় প্রত্যয়”। সোজা কথায় এর মানে হল, পাথর যেমন কখনও জলে ভাসে না, তেমনই যা কিছু ঘটা একান্তই অসম্ভব, তা বাস্তবে ঘটছে দেখলেও বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। তবে এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি দেখলে কবিও হয়তো তাঁর এহেন অনড় বিশ্বাস বদলাতে বাধ্য হতেন। যে অবিশ্বাস্য ঘটনা বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে গোটা পৃথিবীকেই।
আরও শুনুন: এক শহরের মালিক দুই দেশ! কোথায় রয়েছে এমন শহর?
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমির কথা আমরা সকলেই জানি। আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত সাহারা মরুভূমি পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান, অজানা নয় এ কথাও। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই কেবল বালির পাহাড় সাজিয়ে রেখেছে এই বিশাল বিস্তৃত মরুভূমি। মরূদ্যানের দেখা মেলে কালেভদ্রে, কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি দেখা মেলে মরীচিকার। এই মরুভূমি পায়ে হেঁটে পার হওয়ার লক্ষ্যে অভিযানে বেরিয়ে প্রাণও হারিয়েছেন বহু অভিযাত্রী। এমনকি এই মরু অঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় বাস করেন যে মানুষেরা, তীব্র দাবদাহে, জলের অপ্রতুলতার কারণে, তাঁদের জীবনযাত্রাও খুব একটা সহজ হয় না। সাহারা মরুভূমি মানেই যেন এক উত্তপ্ত প্রাকৃতিক অগ্নিকুণ্ড, প্রায় এমন ধারণাই তাই রয়েছে সকলের।
আরও শুনুন: তিনি মেয়র, তিনিই নাগরিক… আশ্চর্য এই শহরের বাসিন্দা মাত্র একজনই
আর সেই সব ধারণা এবার ভেঙে দিল প্রকৃতির খেয়ালই। জানুয়ারির যে শীতে আমরা কাবু, সেই শীতল হাওয়াই এবার নিজের পথ করে নিয়েছে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের উপর দিয়ে। তার ফলে সেখানকার কিছু কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে শূন্যেরও নিচে, এমনকি হিমাঙ্কেও পৌঁছে গিয়েছে তাপমাত্রা। আর তার দৌলতেই পৃথিবীকে চমকে দিয়ে তুষারপাত হয়েছে সাহারা মরুভূমির কিছু কিছু অংশে। বালির পাহাড়ের উপর দেখা গিয়েছে বরফ ছড়িয়ে থাকতে। যদিও মরু অঞ্চলে রাতে তাপমাত্রা একলাফে নেমে যায় অনেকখানি, কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম থাকার কারণে তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু সেই অসম্ভব ঘটনাই এবার সত্যি হয়েছে উত্তর আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে থাকা এই মরু এলাকায়। সাহারা অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকা থেকে অভূতপূর্ব কিছু ছবি তুলে এই ঘটনার প্রমাণ সংগ্রহ করে এনেছেন বিখ্যাত ফটোগ্রাফার করিম বুশেটাটা। মরু অঞ্চলের উষ্ণতা খানিক কমলে তা আঞ্চলিক লোকজনের পক্ষে স্বস্তিদায়ক তো বটেই। কিন্তু তার বাইরেও, গোটা পৃথিবীর কাছেই নতুন গবেষণার রসদ জোগাচ্ছে এই ঘটনা।