নিজের কর্মক্ষেত্রে, একান্ত চেনা পরিবেশে এক মেয়ের ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় বিপন্ন আপামর মেয়েরা। আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাত দখলের ডাক দিয়ে তাই একসঙ্গে পথে নামছেন মেয়েরা। রাজ্য জুড়ে একসঙ্গে গর্জে উঠেছে স্পর্ধার ডাক। কী কী দাবিতে মুখর তাঁরা? আসুন, শুনে নিই।
রাত মানেই ভয়। মেয়েদের জন্য। মেয়েদের সামলে চলা, সাবধানে চলার পরামর্শ। বিপদ হলে মেয়েদেরই বলা, রাতে ওখানে গিয়েছিল কেন! অত রাতে বাইরে ছিল কেন! তা অন্য জায়গায় নাহয় মেয়েদের দোষারোপ করে দায় এড়িয়ে ফেলা যায়। কিন্তু রাজ্যের একটি সরকারি হাসপাতালে, যেখানে রাতের ডিউটি দেওয়ার নিয়ম সরকারেরই বেঁধে দেওয়া, সেখানেই একটি মেয়েকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যর্থতা তবে কার দায়? আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন তুলছেন মেয়েরা। তাঁরা এ কথাও জানেন যে, প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা। তাই উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে তাঁরা এবার রুখে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছেন। ডেকে বলেছেন, চলো, দখল নেওয়া যাক রাতের। রাত কেবল হেনস্তাকারী পুরুষের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হবে, আর রাতে ভয়ে গুটিয়ে থাকবে মেয়েরা, এই নিয়ম পালটাতে চেয়েই রাত দখলের ডাক রাজ্যের মেয়েদের।
আরও শুনুন:
নির্যাতনের দামে কেনা, তাই খোলা আকাশের অধিকার মেয়েদেরও
আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতেই এই রাত দখলের ইস্তেহার হিসেবে ১১ দফা দাবি বেঁধে দিয়েছেন মেয়েরাই। কী কী বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে সেই দাবিসনদে?
প্রথমেই দাবি তোলা হয়েছে, আর জি করের ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। একইসঙ্গে দাবি, দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রকৃত তথ্য আনতে হবে জনগণের সামনে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, পাশাপাশি অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার ব্যাপারে জড়িত সকলের অপসারণ করতে হবে। জোর দাবি উঠছে, আর জি কর থেকে পদত্যাগ করার পর অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। বদলি নয়, অপসারণ করতে হবে অধ্যক্ষকে। এমনকি প্রয়োজনে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, সে বিষয়েও তদন্ত করতে হবে।
আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে যথাযথ তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবির পাশাপাশি, সামগ্রিকভাবে সমাজের সর্বস্তরের মেয়েদের সবসময় সব জায়গায় নিরাপত্তার দাবিতেও সরব এই দাবিসনদ। দাবি করা হয়েছে, সংগঠিত ও অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রে নারী এবং প্রান্তিক লিঙ্গপরিচয়ের সব মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের যাতায়াতের স্থান কাল বেঁধে দেওয়ার বদলে, যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সব কর্মক্ষেত্রে চাই তাদের রাতদিনের ব্যবহারের উপযোগী শৌচালয়। আইসিসি কর্মক্ষেত্রে বিপদ মোকাবিলার যে নির্দেশিকা জারি করে, কর্মক্ষেত্রে তা সক্রিয়ভাবে মানা হোক, চাইছেন মেয়েরা। আর এসবের সঙ্গেই তাঁরা দাবি তুলছেন, কোনও মেয়ে বিপন্ন হওয়ার পরে উলটে তাকেই দোষারোপ করা বন্ধ হোক। আর তার জন্যই ভিক্টিম ব্লেমিংকে আইনের আওতায় আনার দাবি তুলছেন মেয়েরা।
আরও শুনুন:
হাসপাতালে কি আদৌ নিরাপদ মহিলা কর্মীরা? আর.জি.কর মনে করাচ্ছে অরুণাকেও
কলকাতার নানা এলাকায় তো বটেই, শিলিগুড়ি-কোচবিহার থেকে নৈহাটি-চুঁচুড়া, মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-বর্ধমান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে মেয়েদের ডাক। দেশের স্বাধীনতা দিবসের যে ঐতিহাসিক মধ্যরাত, সেই সময়টিই মেয়েদের স্বাধীন চলাফেরার আর্জির সঙ্গে মিশে যেতে চলেছে। রাজ্য জুড়ে মেয়েরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, যত নির্যাতনই আসুক, চলা থামবে না তাঁদের।