হিন্দু শব্দটি নিয়ে সম্প্রতি আবার বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছে। কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা সতীশ লক্ষ্মণরাও জারকিহোলির মতে শব্দটির সঙ্গে ভারতের যোগ নেই। বরং শব্দটির শিকড় পারসিতে। এই বিতর্ক নতুন নয়ে অবশ্য। এরই জবাব দিয়েছিলেন পুরীর শংকরাচার্য। এ প্রসঙ্গে কী বলেছিলেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
হিন্দু শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে সংশয় ও বিতর্ক বহুকালের। মাঝেমধ্যেই তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ইতিহাসবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, হিন্দু শব্দটি সিন্ধু থেকেই এসেছে। পারসিয়ান যোগাযোগের ফলে পরবর্তীতে তা হিন্দু হিসাবে উচ্চারিত হয়। এই হিসাব ধরলে সুপ্রাচীন সনাতন ধর্ম হিসাবে পরিচিত হিন্দু ধর্মের প্রাচীনত্ব নিয়েই খানিক ধন্দ জাগে। তাই এই সংশয় নিরসন করেছিলেন পুরীর শংকরাচার্য।
আরও শুনুন: ভক্তদের প্রণামী থেকে মাথার চুল বিক্রি… বিভিন্ন পথে তিরুপতির তহবিলে কোটি কোটি টাকা
ধর্মীয় গুরু জানিয়েছিলেন, হিন্দু শব্দটি বৈদিক ও পৌরাণিক। অর্থাৎ সুপ্রাচীন কালেও হিন্দু শব্দের ব্যবহার ছিল। তাঁর দাবি, হজরৎ মহম্মদ এবং যিশুর জন্মের আগেও হিন্দু শব্দটি ব্যবহৃত হত। তিনি জানিয়েছেন, আলেকজন্ডার হিন্দুকুশে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। ‘আবেস্তা’-তেও বহু বৈদিক শব্দের ব্যবহার দেখা যায় যার মধ্যে হিন্দু শব্দটিও ছিল। আবার কালিকা পুরাণে প্রায় সম উচ্চারণের একটি শব্দ পাওয়া যায়- হিন্দ্বো। শব্দটির অর্থ, বেদ মার্গীয়। অর্থাৎ বেদ নির্দেশিত পথে যাঁরা গমন করেন তাঁরাই হিন্দ্বো বা হিন্দু। ‘রামকোশ’ ও ‘পারিজাতহরণ’ নামে দুই প্রাচীন নাটকের উল্লেখ করে তিনি জানান, সেখানেও হিন্দু শব্দটির প্রয়োগ আছে। তবে এর সবথেকে ভালো ব্যাখ্যা মেলে ‘মাধবদিগ্বিজয়’-এ। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, যাঁর বীজমন্ত্র ‘ওম’, যিনি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন, গরু ও নদীর পূজা করেন, বৈদিক ঋষিদের গুরু হিসাবে বিশ্বাস করেন, তিনিই হিন্দু। অর্থাৎ বহু নিদর্শন তুলে ধরেই তিনি জানিয়েছিলেন, হিন্দু শব্দটির ব্যবহার ভারতবর্ষে বহুকাল ধরেই আছে। বর্তমানে হিন্দু শব্দটির প্রয়োগ যেভাবে হয়, সেভাবে না হলেও শব্দটির ব্যবহারিক প্রয়োগ ছিল। তাহলে প্রাচীনকালে কাদের বলা হত হিন্দু? শংকরাচার্য জানিয়ে দিয়েছিলেন, উদার দয়ালু কর্তব্যবোধসম্পন্ন এবং শত্রুনিধনে সক্ষম ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতেই হিন্দু শব্দের প্রয়োগ করা হত।
আরও শুনুন: মেয়ে গেল কলেজে, ফেরার পথে হাপুস নয়নে কান্না বাবার, দেখে আপ্লুত নেটদুনিয়াও
তবে এইসব ব্যাখ্যা পেরিয়ে ফের বিতর্ক উসকে দিয়েছেন কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা। হিন্দু শব্দের সঙ্গে ভারতের যোগ নেই, এই ধরনের কথার তীব্র প্রতিবাদ করেছে গেরুয়া শিবির। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। নেতার এই মন্তব্যে যে দলের সায় নেই, তাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসের তরফে।